এশিয়া
বিদেশে এখন
গরুর মাংসের চড়ামূল্যের বাজারে আশার আলো
গরুর মাংসের চড়ামূল্যের বাজারে আশার আলো হিসেবে সামনে এলো পরীক্ষাগারে তৈরি হাইব্রিড বিফ রাইস। দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনে ভাতের সঙ্গে পাওয়া যাবে গরুর মাংসের স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণ। প্রতি কেজি ভাত বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ ডলারে।

ভোজন রসিকদের জিভে জল এনে দেয়ার মতো খাবার গরুর মাংসের সঙ্গে ভাত। বিশ্বজুড়ে ফসলি জমি কমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরু লালন পালনের খরচ। তাই সাধ ও সাধ্যের ব্যবধানে পাতে ভাত থাকলেও অনুপস্থিত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যটি। তবে ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে মাথায় রেখে পরীক্ষাগারে বিশেষ ধরনের চাল তৈরি করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার একদল বিজ্ঞানী। যাতে পাওয়া যাবে গরুর মাংসের সকল পুষ্টিগুণ।

হাইব্রিড খাবারটি নিয়ে গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিঙ্কি হং। মূলত সেল কালচার প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় হাইব্রিড বিফ রাইস। প্রথমে চালের ওপর মাছের জেলাটিনের প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে সহজে মাংসের কোষগুলো ধানের দানার সাথে লেপ্টে থাকে। তারপর এর মধ্যে গরুর পেশি ও চর্বিযুক্ত স্টেম সেল যুক্ত করে কয়েকদিনের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিশেষ পাত্রে। প্রস্তুতকৃত হাইব্রিড বিফ রাইসে সাধারণ চালের তুলনায় ৮ শতাংশ প্রোটিন ও ৭ শতাংশ চর্বি বেশি পাওয়া যায়।

ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিঙ্কি হং বলেন, 'এ চালে আপনি প্রোটিন ও চর্বি বেশি পাচ্ছেন। চালের মোট প্রোটিনের ১৮ শতাংশই প্রাণিজ। অর্থাৎ হাইব্রিড চালে অ্যামিনো এসিডের প্রাচুর্য রয়েছে।'

দক্ষিণ কোরিয় এ গবেষক জানান ধান থেকে চাল উৎপাদনে প্রয়োজন ৩ থেকে ৮ মাস। অন্যদিকে একটি গরুকে খাদ্য উপযোগী করতে প্রয়োজন ১ থেকে ৩ বছর। তবে পরীক্ষাগারে তৈরি এ হাইব্রিড চাল প্রস্তুত হবে ১০ দিনেরও কম সময়ে। তাই প্রাণিজ আমিষের ওপর চাপ কমাতে বিফ রাইস সহায়ক হবে বলে আশাবাদী হং।

জিঙ্কি হং আরও বলেন, 'প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান করা জরুরি। তবে শুধুমাত্র আমাদের খাদ্যের জন্য প্রাণীদের চাষাবাদ জরুরি নয়। আমি মনে করি হাইব্রিড বিফ রাইস এমন প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাস করে স্বাস্থ্যকর পৃথিবী তৈরি করবে। সঙ্গে টেকসই প্রোটিনের উৎস নিশ্চিত করবে।’

এরই মধ্যে গরুর মাংসের ঘ্রাণ ও মাখনের স্বাদযুক্ত হাইব্রিড বিফ রাইসের বিক্রি শুরু হয়েছে কোরিয়ার একটি রেস্টুরেন্টে। প্রতি কেজি ভাত বিক্রি হচ্ছে ২ ডলারে। তবে আসল স্বাদ পেতে অনেকেই হাইব্রিড ভাতের সঙ্গে আলাদাভাবে নিচ্ছেন গরুর মাংস।

ভোক্তারা বলেন, 'এটি আসলে খুবই উদ্ভাবনী ধারণা। তবে সত্যি বলতে গরুর মাংসের জুসিনেস এ ভাতের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে এখনই এই ভাতকে গরুর মাংসের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। তবে গবেষণার প্রথমদিকেই যেহেতু এতো অগ্রগতি হয়েছে, সামনে স্বাদ আরও উন্নতি করবে।'

২০১৩ সালে লন্ডনে সর্বপ্রথম ল্যাবে তৈরি বার্গার বিক্রির পর থেকে শুরু হয়েছে কৃত্রিম মাংস বাজারে আনার প্রতিযোগিতা। গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষকালীন ত্রাণ, সামরিক রেশন ও মহাকাশের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে হাইব্রিড বিফ রাইসকে।

এভিএস