ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার তিনদিন পরও চূড়ান্ত ফলাফল আসেনি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট গঠন নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এদিকে সরকার গঠনের দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ২৬৫টিতে। এখন পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯০টির বেশি আসন। ৭০টির বেশি আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে নওয়াজ শরীফের দল পিএমএল-এন। আর এর পরেই বিলওয়াল ভুট্টোর পিপিপি’র ঝুলিতে ৫০টির বেশি আসন।
পাকিস্তানে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পরিষদে অন্তত ১৩৪ আসন দরকার। এবার সেটা কেউই না পাওয়ায় ছুটতে হচ্ছে জোট সরকারের দিকে। তবে কার সঙ্গে কে জোট বাধবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।
নওয়াজ শরীফ বলছেন, বিভিন্ন দলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তবে এসব দাবি নাকচ করে দিয়েছে বাকি দলগুলো। পিপিপি দলের নেতা বিলওয়াল ভুট্টো বলছেন, জোট গঠন নিয়ে কোনো দলের সঙ্গেই তাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
ফলাফলে এগিয়ে থাকলেও সরকার গঠন নিয়ে শঙ্কায় আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। এছাড়া দল না থাকায় তাদের ভাগ্যে সংরক্ষিত আসনও জুটবে না। তাহলে করণীয় কি?
ইতিহাস বলছে, এর আগে ১৯৮৫ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের সময়ে পুরো পার্লামেন্ট তৈরি হয়েছিল স্বতন্ত্রদের দিয়ে। সেই সময় নির্দলীয় নির্বাচনে কোনও দলীয় প্রার্থীরা অংশ নেয়নি। ভোট হয়েছিল স্বতন্ত্রভাবে। যদিও প্রার্থীরা কোনও না কোনও দলের সমর্থনে ছিলেন। তবে কাগজে-কলমে তারা ছিলেন স্বতন্ত্র। বিজয়ী প্রার্থীরা পার্লামেন্টে এসে দলের নাম দেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ। যা এখন পিএমএল-এন ও পিএমএল-কিউ নামে পরিচিত।
এক্ষেত্রে পিটিআই দলের নির্বাচনি প্রতীক কেড়ে নিলেও দলটির পিটিআইয়ের নিবন্ধন বাতিল করেনি পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। আইনগতভাবে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে পিটিআই। দেশটির সংবিধানে আছে, স্বতন্ত্ররা যে কোন দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারবেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নওয়াজ শরীফ বা বিলওয়ালার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন কি-না। আর যদি নওয়াজ-বিলওয়াল এক হয়ে যায়, তাহলে সর্বোচ আসন পেয়েও রাজনীতির মাঠ থেকে খালি হাতে বিদায় নিতে হবে পিটিআইকে।
ফল ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তিন দিন সময় পাবেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এককভাবে একটি দল গঠনের সুযোগ আছে তাদের। সংসদে তাদের দল বড় হলে, বিদ্যমান একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে। মজলিশ ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিন নামে নিবন্ধিত দলে পিটিআই-এর যোগ দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এই দলে যোগ দিলে তারা সংরক্ষিত আসনের ভাগও পাবে। পরে সেখান থেকে তাদের পছন্দে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে পারবেন।
নির্বাচনে পিটিআই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার দাবি করে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান গহর খান বলেন, পিটিআই থেকে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা ঠিক করবেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান।
তিনি আরও বলেন, জনগণের সমর্থনকে সম্মান জানাতে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। চূড়ান্ত ফলাফলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা উচিত। লাঠি নয়, দেশের পতাকা হাতে সবাইকে নির্বাচন অফিসের সামনে এসে প্রতিবাদে জানাতে হবে।
জোট নিয়ে দৌড়ঝাঁপের মধ্যে সব দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান পাকিস্তান সেনাপ্রধান। অরাজকতা ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে সরে এসে পাকিস্তানের হাল ধরতে বলেন তিনি। আর নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল দ্রুত প্রকাশ না করা হলে বিক্ষোভে নামার হুঁশিয়ারি দেন পিটিআই সমর্থকরা।