এশিয়া
বিদেশে এখন
ঋণে জর্জরিত চীনের আবাসন প্রতিষ্ঠান এভারগ্রান্ড
ঋণে জর্জরিত চীনের অন্যতম প্রধান আবাসন প্রতিষ্ঠান এভারগ্রান্ডের সব সম্পদ জব্দ ও বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে হংকংয়ের এক আদালত। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন।

বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ চীনের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আবাসন খাতে বড় ধাক্কা লাগে ২০২১ সালে, যখন ঋণের বোঝায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর খড়গহস্ত হয় কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে চীনা আবাসন খাতের সমার্থক যে এভারগ্রান্ড, সেই প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতিকে।

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা আর একের পর এক মামলায় জড়ানোর দুই বছরেও কোনো গ্রহণযোগ্য পুনর্গঠন প্রস্তাব দিতে পারেনি এভারগ্রান্ড। আর তাই ৩২ হাজার ৫শ' কোটি ডলারের ঋণে ডুবে থাকা এভারগ্রান্ডকে সোমবার বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত আবাসন প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিয়েছে হংকংয়ের একটি আদালত। বিচারপতি লিন্ডা চ্যানের আদেশে এভারগ্রান্ডের সব সম্পদ জব্দ ও বিক্রি করে শোধ করা হবে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ। এভারগ্রান্ডের সম্পত্তির পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি ডলার।

চীনের পুঁজিবাজারে যখন নিম্নমুখী প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ, তখন এভারগ্রান্ডের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত চীনের অর্থবাজারে বড় ধরনের ফাটল ধরাবে বলে বাড়ছে শঙ্কা। হংকংয়ের ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে মুহূর্তেই ২০ শতাংশের বেশি দরপতন হয় এভারগ্রান্ডের, এরপর স্থগিত করে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বেচাকেনা।

ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদক লোরেট্টা চেন বলেন, এটা সত্যিই প্রতিষ্ঠানটির জন্য অথবা প্রতিষ্ঠানটির ধসের পথে মনে রাখার মতো এক মুহূর্ত। হংকংয়ের পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানটির সব শেয়ার হল্টেড রয়েছে। আর কখনো এসব শেয়ার আলোর মুখ দেখবে বলেও এখন পর্যন্ত কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না।

চীনে মোট অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশই আবাসন খাতের অবদান। হংকংয়ের এ রায়ের বাস্তবায়ন নির্ভর করছে চীন সরকারের ওপর। এভারগ্রান্ডের সম্পদের বেশিরভাগই চীনের মূল ভূখণ্ডে এবং পাওনাদারদের বেশিরভাগই চীনের নাগরিক; আইনি পথে পাওনা অর্থ আদায়ের উপায়ও তাদের জন্য বেশ সীমিত। অন্যদিকে মূল ভূখণ্ডের বাইরে যেসব অঞ্চলের পুঁজিবাজারে এভারগ্রান্ডসহ বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত, সেসব অঞ্চলে মামলা দায়েরে সক্ষম বিদেশি ঋণদাতারা; যাদের অনেকে বেছে নিয়েছেন হংকংকে। আবার চীনা নাগরিকদের আগে বিদেশি ঋণদাতারা অর্থ ফেরত পাবেন, নেই এমন সম্ভাবনাও। সবমিলিয়ে সম্পদ জব্দ ও বিক্রি করে অর্থ আদায়ের এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে লেগে যেতে পারে কয়েক বছর।

হংকংয়ের আদালতের রায়ের পর এভারগ্রান্ডের পরিচালকদের হাতে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ আর থাকছে না। তবে সম্পদ জব্দ ও বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের মানেই এভারগ্রান্ডের বিলুপ্তি নয়। কারণ আদালতের রায়ে নির্মাণকাজ তাৎক্ষণিক বন্ধ করতে হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটিকে। তারওপর বাসস্থান নির্মাণের আগেই অর্থ পরিশোধ করা সাধারণ গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিতে আবাসন ব্যবসায়ীদের ডুবতে দিতে নারাজ চীন সরকার। তবে এসব কারণে হংকংয়ের আদালতের রায় বেইজিং আমলে নেবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। এর আগে সুনাক চায়না, জিয়াইউয়ান ও কায়সাসহ দেউলিয়াঘোষিত কয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রায় দিয়েছে হংকং।

গেলবছর আগস্টেও ঋণ পরিশোধে নতুন পরিকল্পনার ওপর কাজ করছিল এভারগ্রান্ডে। তারমধ্যে মার্কিন ভূখণ্ডে নিজেদের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

এসএসএস