সময় যতই গড়াচ্ছে, লক্ষ্যদ্বীপ ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন বাড়ছে মালদ্বীপের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অশোভন মন্তব্যের জেরে তিন উপমন্ত্রীকে বহিষ্কার করেও চাপ সামলাতে পারছে না দ্বীপরাষ্ট্রটি।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) দেশটির হাইকমিশনারকে তলব করে কড়া ভাষায় নিন্দা জানায় নয়াদিল্লি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগামী মাসে ভারত সফরের প্রস্তাব দিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুইজ্জু।
ভারতীয়দের জন্য মালদ্বীপ আকর্ষণীয় ভ্রমণস্থল হলেও নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বাড়ছে হ্যাশট্যাগ বয়কট মালদ্বীপ পোস্ট। অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে সালমান খানের মতো বাঘা বাঘা বলিউড তারকা, এমনকি ক্রিকেটের কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকারও সমালোচনা করতে ছাড়েননি মালদ্বীপ সরকারের কার্যক্রমকে।
ভারতীয় পর্যটকদের প্রতিবেশী মালদ্বীপের বদলে নিজ দেশের লক্ষ্যদ্বীপে যাবার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে ট্রেন্ড চলছে 'হ্যাশট্যাগ চলো লক্ষ্যদ্বীপ' পোস্ট।
অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম মেক মাইট্রিপে লক্ষ্যদ্বীপ নিয়ে সার্চ বেড়েছে ৩ হাজার ৪০০ শতাংশ বেশি। ইতোমধ্যেই মালদ্বীপের সব ফ্লাইট বুকিং স্থগিত করেছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম ইজি মাইট্রিপ। প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত পিট্টি জানান,'প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ পর্যটক ভারত থেকে মালদ্বীপে ভ্রমণ করেন। আমরা বড় এ ব্যবসাকে ছেড়ে দিচ্ছি। কারণ লক্ষ্যদ্বীপের মতো নিজেদের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর জন্য আমরা প্রচার বাড়াতে চাই।'
১ হাজার ১৯২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। বিলাসবহুল সব রিসোর্টের দেশটিতে গেলো বছর ভ্রমণ করেছে ১৮ লাখ পর্যটক, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ পর্যটক ছিল ভারত ও রাশিয়ার।
কূটনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে মালদ্বীপের পর্যটন খাতে ধস নামতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে ভারতের লক্ষ্যদ্বীপকে মালদ্বীপের বিকল্প পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ভারত-ইসরাইলের যুগলবন্দিও বাড়াচ্ছে শঙ্কা।
মালদ্বীপের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিয়া দিদি বলেন, 'ভারত আমাদের জন্য ইমার্জেন্সি নাম্বারের মতো। যখনই আমাদের প্রয়োজন হয়, আমরা ভারতকে স্মরণ করি। ভারত আমাদের সাহায্য করে। যখন এমন বন্ধুকে নিয়ে অশোভন মন্তব্য করা হয়, সেটি আসলেই দুঃখজনক।'
সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের কেরালায় লক্ষ্যদ্বীপ ভ্রমণে গিয়ে সাধারণ মানুষকে দ্বীপপুঞ্জটিতে বেড়াতে যাওয়ার আহ্বান জানান নরেন্দ্র মোদি। এরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ভাঁড়, সন্ত্রাসী ও ইসরাইলের পুতুল আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন মালদ্বীপের তিন উপমন্ত্রী।
তাদের দাবি, লক্ষ্যদ্বীপকে মালদ্বীপের আদলে গড়ে তুলতে চাইছেন মোদি, যেখানে মালদ্বীপের সৌন্দর্যের সামনে লক্ষ্যদ্বীপ কিছুই নয়।
নয়াদিল্লি ও মালে'র মধ্যে কূটনৈতিক মিত্রতা ইতিহাস দীর্ঘ হলেও গেল নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম বিষয় ছিল 'ভারত তাড়াও'।
ক্ষমতায় এসেই মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারে তৎপরতাও শুরু করেন চীন-রাশিয়াপন্থি এ প্রেসিডেন্ট।