জাপানে ভূমিকম্প প্রায় নিয়মিত ঘটনা হলেও সোমবার শক্তিশালী কম্পনের পর দেড় শতাধিক আফটারশকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এখন বাড়ছে প্রাণহানি, বহুতল ভবনে দেখা দিচ্ছে ফাটল। এছাড়া জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা ওয়াজিমাতে বিশাল আগুনে প্রায় নাকাল হয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয় সময় সোমবার বিকালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নোতো উপদ্বীপের ইশিকাওয়া। ২০১৫ সালের পর শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নানাও এলাকায় ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে গাড়ি। রানওয়েতে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় একটি বিমানবন্দরে ফ্লাইটের ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সড়ক যোগাযোগও। স্থগিত রয়েছে রেল যোগাযোগ।
ভূমিকম্পের জাপানের ওয়াজিমায় ভয়াবহ আগুন
ভূমিকম্পের সময় ওই এলাকায় থাকা একজন জানান, 'আমরা পাহাড়ের ওপর একটি হোটেলে ছিলাম যখন এ ভূমিকম্প হয়। ভয়াবহ এক ঘটনার সাক্ষী হলাম। পুরো ঘর দুলছিল, টিভি কাঁপছিল।'
ভূমিকম্পের পর আগুনে ইশিকাওয়ার জনপ্রিয় পর্যটন নগরী ওয়াজিমাতে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিত ভবন ও স্থাপনা। দীর্ঘ চেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হলেও মঙ্গলবার সকালেও কয়েকটি জায়গায় আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তা, আর ফায়ার সার্ভিস কর্মী ভূমিকম্পকবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, 'সড়কে ভাঙন, ভূমিধস ও আগুনে বিপুল ক্ষতির তথ্য মিলেছে। দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে পুলিশ, দমকল বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা তো কাজ করছেই, দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা এলাকাগুলোতে গেছেন।'
জাপানে ভূমিকম্পের পর চলছে উদ্ধারকাজ
ভূমিকম্পের প্রভাবে বড় ধরনের সুনামি সতর্কতা জারি করা হয় এবং পাঁচ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসেরও ভয় ছিল। সুনামির ঢেউয়ের ধাক্কা লাগলেও সর্বোচ্চ ঢেউটি ছিল ইশিকাওয়ার ওয়াজিমা বন্দরে, সোয়া এক মিটার উঁচু। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ সব ধরনের সুনামি-জলোচ্ছ্বাস সতর্কতা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু দেড়শ'র বেশি আফটারশকের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাসিন্দাদের না ফেরার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, 'অতীতে আমরা দেখেছি যে বড় বড় ভূমিকম্পের পর কাছাকাছি শক্তির আরও ভূমিকম্পের হার ২০ শতাংশ। তাই এক জানুয়ারির ভূমিকম্পের পর অন্তত আরও সাতদিন সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।'
আরও ভূমিকম্পের আশঙ্কায় খোলা আকাশের নিচে রাতকাটানো আপাতত আশ্রয়হীন মানুষের জন্য খাবার-পানি আর কম্বলসহ জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করছে সেনাবাহিনী। দুর্যোগ মোকাবিলায় জাপান সরকারকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।