মাদক পরিবহনের অভিযোগে গেল কয়েক মাস ধরেই ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চলাচল করা জাহাজে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয় লাতিন অঞ্চলে বিশাল সামরিক বাহিনীও মোতায়েন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তেলের ট্যাংকার জব্দের পাশাপাশি ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এমন অবস্থায় মার্কিন অবরোধের সমর্থকদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখে পার্লামেন্টে একটি খসড়া প্রস্তাব পাশ করেছে ভেনেজুয়েলা সরকার। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তেলবাহী জাহাজ অবরোধ ও জলদস্যুতা সংক্রান্ত কার্যকলাপে সহায়তা বা অর্থায়নকারীদের সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এটি ভেনেজুয়েলার সামুদ্রিক বাণিজ্যকে সুরক্ষা দেবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
মাদুরোর মতে, আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে ভেনেজুয়েলা। তেলবাহী জাহাজে হামলাকে জলদস্যুতা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেন তিনি। তার দাবি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য ভেনেজুয়েলাকে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অদ্ভুত জলদস্যুতার আচরণের নিন্দা জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ ভেনেজুয়েলাকে অবাধ নৌচলাচলের অধিকার এবং মুক্ত বাণিজ্যের অধিকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ভেনেজুয়েলা আইন, সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে ভেনেজুয়েলার আরও অনেক এগিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:
এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, মাদুরো এবং তার অবৈধ শাসন টিকিয়ে রাখতে অর্থায়নের বড় হাতিয়ার এ ট্যাঙ্কারগুলো। যেগুলোতে মাদক ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিনিয়োগ আছে। যা যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য গুরুতর হুমকি। যদিও, মার্কিন পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া ও চীন। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। অন্যান্য লাতিন দেশও মার্কিন হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়া।
জাতিসংঘের নিযুক্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘গেল কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখছে, মাদক অভিযান ও সন্ত্রাস দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বন্ধুপূর্ণ দেশ ভেনেজুয়েলায় আক্রমণ চালাচ্ছে। যা গোটা অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে চলছে। একইসঙ্গে ক্যারিবিয়ান সাগরে বেসামরিক জাহাজগুলোকে অবৈধভাব ধ্বংস করছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ভেনেজুয়েলার তেল ট্যাঙ্কার জব্দ, অবরোধ ও হামলার ঘটনায় উল্টো যুক্তরাষ্ট্রই বিপাকে পড়বে। ভেনেজুয়েলার ভারী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর বহু মার্কিন শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্ভরশীল। এদিকে, জ্বালানি তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ।
ভেনেজুয়েলার স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা অন্যান্য দেশে তেল বিক্রি করে টিকে থাকতে পারবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র অনেকাংশেই ভেনেজুয়েলার জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল।’
অন্য আরেকজন ব্যক্তি বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভেনেজুয়েলার জনগণের ওপর প্রভাব পড়ছে। জ্বালানি তেলের ওপর আমাদের জীবিকা নির্ভর করে আছে।’
সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবিয়ান ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে ২৬টিরও বেশি মাদকবাহী জাহাজে হামলা চালিয়েছে পেন্টাগন। এতে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ। চলতি মাসেই জ্বালানি তেলে পরিপূর্ণ দুটি ট্যাঙ্কার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।





