দূষণের কবলে টাইগ্রিস নদী: পানি কমতে থাকায় ঝুঁকির মুখে লাখো মানুষের জীবন

টাইগ্রিস নদী
টাইগ্রিস নদী | ছবি: সংগৃহীত
0

ইরাকের ঐতিহ্যবাহী টাইগ্রিস নদী দূষণ ও পানি কমতে থাকায় ঝুঁকির মুখে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় দেশটির মান্দাইয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ। নদীর অববাহিকায়ই নিজেদের সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন মান্দাইয়ানরা।

পানি নেই তো, জীবন নেই! বা পানির অপর নাম জীবন! মানব জাতিসহ পৃথিবীর সব প্রাণীকুলের জন্যই এ কথা চিরসত্য। পানি দূষণ ও শুকিয়ে যাওয়ায় যা এখন হারে হারে টের পাচ্ছেন ইরাকের টাইগ্রিস নদী অববাহিকায় থাকা জনগোষ্ঠী। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বিশ্বের প্রাচীনতম নস্টিক ধর্ম বিশ্বাসী মান্দাইয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ। কারণ তৃষ্ণা মেটানোসহ সব কাজেই কেবল প্রবহমান নদীর পানিই ব্যবহার করেন তারা।

কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছেন ইরাকের মান্দাইয়ান সম্প্রদায়ের ৬৮ বছর বয়সী ধর্মীয় নেতা শেখ নিধাম ক্রেইদি আল-সাবাহি। কারণ তাদের জীবনে অক্সিজেনের মতোই পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্ম থেকে মৃত্যু; জীবনের প্রতিটি বড় উপলক্ষে নদীর পানিতে নেমে পবিত্র হওয়ার রীতি মেনে চলেন মান্দাইয়ানরা। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় নদীর পানিতে। এমনকি মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ পবিত্র গোসলও হয় এখানেই।

আরও পড়ুন:

এমন পরিস্থিতিতে টাইগ্রিস তীরে গড়ে ওঠা প্রাচীন সভ্যতা ও হাজার হাজার জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে। এরইমধ্যে অস্তিত্ব রক্ষায় ইরাক ছেড়েছেন মান্দাইয়ান সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। আবার অনেকে উজানের দিকে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছেন। নদীটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেলে ইরাকে থাকা এ জনগোষ্ঠীটিও চিরতরে হারিয়ে যাবে বলে মনে করা হয়।

১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ 'অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম'-এর সময় ইরাকে এই অত্যাধুনিক জল অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তখন ধ্বংস হয় সেখানকার শোধনাগারগুলো। ফলে বর্জ্য সরাসরি মিশতে থাকে টাইগ্রিস নদীতে। সেই সংকট থেকে আজও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দেশটি। যার ভয়াবহ প্রভাবে ধুঁকছে টাইগ্রিস। এমনকি জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে দেশটিতে বৃষ্টিপাত ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ায় সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

এ অবস্থায় মৃতপ্রায় টাইগ্রিস রক্ষায়; বাঁধ থেকে আরও বেশি পানি ছাড়ার জন্য উত্তরের প্রতিবেশী তুরস্ককে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে ইরাক। গত নভেম্বরে সমঝোতাও করেছে বাগদাদ ও আঙ্কারা। এ আওতায় দূষণ রোধ, আধুনিক সেচ-প্রযুক্তি, কৃষিজমি পুনরুদ্ধার ও পানির সুষম বণ্টন নিয়ে কাজ করা হবে। তবে এর মাধ্যমে ইরাকের পানিসম্পদের নিয়ন্ত্রণ তুরস্কের হাতেই তুলে দেয়া হলো কি-না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।

ইতিহাস বলছে, ইরাকের টাইগ্রিস নদীর তীরেই প্রথম শুরু হয়েছিলো কৃষিকাজ। আবিষ্কৃত হয় প্রথম চাকা ও বর্ণমালাও। এমনকি এখনও দেশটির প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই নদীর পানির ওপরই নির্ভরশীল।

ইএ