৬৫ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের নাগরিক সোপি কুনকেম। কম্বোডিয়ার হামলায় নিজের একমাত্র বসত-ভিটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ায় চোখে-মুখে হতাশা, দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কের ছাপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে ২৬ অক্টোবর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির দেড় মাস না যেতেই আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আরও বহু বাসিন্দা।
জীবন রক্ষায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাই নিয়েছেন কয়েক লাখ লাখ মানুষ। এই পরিস্থিতির জন্য ক্ষোভ ঝাড়ছেন কম্বোডিয়ার ওপর।
থাই বাসিন্দারা বলেন, ‘কম্বোডিয়ানরা বিশ্বাসের যোগ্য নয়। তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেও গুলি চালানো বন্ধ করেনি। আমাদের সেনাবাহিনী তাদের পরাজিত করতে না পারলে সীমান্ত এলাকায় বসবাস করে কখনও সুখ পাওয়া যাবে না।’
থাইল্যান্ডের একজন নাগরিক বলেন, ‘আমি চিন্তিত। আমি ভয় পাচ্ছি যে লড়াই এই এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়তে পারে। খুবই বিপজ্জনক দিন কাটছে আমাদের।’
আরও পড়ুন:
সীমান্ত সংঘাত নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় ধুঁকছেন কম্বোডিয়ানরাও। আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় বাড়লেও, থাইল্যান্ডের চেয়ে সংখ্যাটা অনেক কম। তবে শীত মৌসুমে ঘর ছাড়া হওয়ায় দুশ্চিন্তার পাল্লা ভারী হচ্ছে তাদের।
কম্বোডিয়ান এক নাগরিক বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হওয়ার পর আবারও এভাবে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হবে তা কল্পনাও করিনি। ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় কিছুই সঙ্গে আনতে পারিনি। খাবার কেনার টাকাও নেই। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পর্যাপ্ত শীতের জামা-কাপড় না থাকায়ও কষ্ট করতে হচ্ছে।’
সংঘাত উত্তেজনার জন্য পাল্টা-পাল্টি দোষারোপের মধ্যে এখন বড় প্রশ্ন হলো; ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তি চুক্তিতে কি শত বছরের পুরনো সীমান্ত বিরোধ মীমাংসে কার্যকর কোন শর্ত উল্লেখ ছিলো? এ ক্ষেত্রে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে কেবল উচ্চ শুল্কের হুমকিকেই কবজ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১৯০৭ সালে থেকে দুই দেশের মধ্যকার বিতর্কিত সীমান্ত ইস্যুতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বেশি দিন স্থায়ী হলো না যুদ্ধবিরতি। ব্যাংকক- নমপেনের দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতা নিরসনে আদৌ স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জন সম্ভব কিনা তা নিয়েও সংশয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক গ্রেগ পোলিং বলেন, ‘এটি একটি যুদ্ধবিরতি, এটি একটি শান্তি চুক্তি নয়। যা কখনো কোনও অন্তর্নিহিত সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। আমি মনে করি এই উত্তেজনা একটি চক্রকে উৎসাহিত করে যা থেকে একেবারে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন।’
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। যেখানকার পান্না ত্রিভুজ নামের একটি ভূখণ্ড নিয়ে ১১৮ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে। কারণ প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনা সমৃদ্ধ অঞ্চলটি থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া উভয়েই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছে।
নিজেদের উপনিবেশ থাকা অবস্থায় ১৯০৭ সালে কম্বোডিয়ার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে ফ্রান্স। যেখানে পান্না ত্রিভুজকে কম্বোডীয় ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়েছিলো। তখন প্রতিবাদও জানিয়েছিল থাইল্যান্ড। ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর কম্বোডিয়া স্বাধীন হওয়ার পরও এলাকাটি নিজেদের দখলে রাখে নমপেন। ফলে ব্যাংকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েই গেছে। যা কারণে বারবার হওয়া সংঘাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও স্থায়ী হয়নি কোনটি।





