১৭ বছরের ব্যবধানে এমন ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হলেন হংকংবাসী। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পর তায় পো'র ওয়াং ফুক কোর্টের আবাসন কমপ্লেক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণ এলেও, প্রাণ গেছে বহু মানুষের।
তবে হংকংয়ের ইতিহাসে ৩ দশকের মধ্য সবচেয়ে বেশি মর্মান্তিক এই অগ্নিকাণ্ড ছাপিয়ে আলোচনায় ভবন সংস্কারে ব্যবহৃত বাঁশের মাচা বা কাঠামো যার ওপর ভর করে উঁচু জায়গায় মেরামতের কাজ করেন নির্মাণ শ্রমিকরা। ভবন নির্মাণের সময় বাঁশের মাচা ব্যবহারের এই রীতি অন্তত ২ হাজার বছর পুরনো।
এই মুহূর্তে হংকং-এ নির্মাণাধীন এমন শতাধিক ভবন দেখা যাবে যেখানে অবকাঠামোর সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে এমন একটি বাঁশের কাঠামো- যার ওপর ভর করেই অসম্পূর্ণ ভবনের বিভিন্ন তালায় কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা।
নিরাপদ নির্মাণ ব্যবস্থা নিয়ে হংকংয়ের দম্ভ প্রায় চূর্ণ করে দিয়েছে এই বাঁশের মাচা। রয়টার্স, সিএনএন, আল জাজিরাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, তায়-পোর ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে আগুনের ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সহজে দাহ্য বাঁশ ও এরসঙ্গে জড়ানো নাইলন দড়ি, সিন্থেটিক পলিমারের জালের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন:
ছবিতেও স্পষ্ট দেখা যায়, বুধবার আগুন লাগার সময় ৩১ তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে সংস্কার কাজ চলছিল এবং সেখানে ব্যবহৃত হচ্ছিল বাঁশের মাচা ও সিন্থেটিক জাল।
গেল মার্চ থেকে ৫০ শতাংশ নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিকদের ভর রাখার জন্য বাঁশের বদলে ধাতব মাচা বা কাঠামো ব্যবহারে উৎসাহিত করেছিল দেশটির উন্নয়ন ব্যুরো। অর্থাৎ সতর্ক হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
এই অগ্নিকাণ্ডের পর আটক করা হয়েছে ওই অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কারের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন প্রকৌশলীকে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রাণহানি ঘটেনি। আর এই অভিযোগের ভিত্তি, ভবন মেরামতের কাজে সহজে দাহ্য উপকরণের ব্যবহার।
সংবাদমাধ্যম এপি'র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভবনের নির্মাণ কাজে দ্রুত দাহ্য স্টাইরোফোমের ব্যবহার প্রসঙ্গ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি ভবনের এমন অংশে জানালাগুলোতে লাগানো আছে হালকা ও টেকসই ফোম। এগুলো খুব অল্প তাপেই গলে যায়।
দ্রুত দাহ্য হওয়ায় স্টাইরোফোমের ব্যবহার নিয়ে বিধিনিষেধ থাকলেও অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়া ভবনের অংশেও এই ফোম লাগানো ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে এপি'র ওই প্রতিবেদনে।
সিন্থেটিক পলিমারে তৈরি স্টাইরোফোমের মধ্যে প্রায় ৯৫-৯৮ শতাংশই বাতাস। এতে ফোমটি যেমন হালকা ও ভাসমান হয়, তেমনি এর সাহায্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
মোটা দাগে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ভবন সংষ্কারে ব্যবহৃত অনেক উপকরণই অতি দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি। বাঁশ, সিন্থেটিক পলিমার জাল, নাইলনের দড়ি, স্টাইরোফোম- ইত্যাদি উপকরণের বিকল্প ব্যবহার করা হলে আগুন এত ভয়াবহ হতো না।





