গাড়ি থেকে নেমে এলেন একদল সেনা। আয়োজনের বহর দেখে মনে হতে পারে, এ বুঝি কোনো অভিযান বা সামরিক মহড়া। জাপানের উত্তরপ্রান্তের একটি পাহাড়ি অঞ্চলের দৃশ্য এটি। প্রায় ২২০ পাউন্ডের লোমশ কানওয়ালা এক প্রাণীর আতঙ্কে ঘুম হারাম স্থানীয়দের। জানাচ্ছিলাম জাপানের ভাল্লুক আতঙ্কের কথা।
শুনতে কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও এই মুহূর্তে জাপানের ছোট্ট শহর আকিতার সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাল্লুক। গেল এক বছরে ৮ হাজারেরও বেশিবার আকিতার লোকালয়ে হানা দেয় ভাল্লুক। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভাল্লুকের আক্রমণের শিকার হয়েছে শতাধিক বাসিন্দা। প্রাণও গেছে বেশ কয়েকজনের। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ভাল্লুকের আক্রমণে হতাহতের ঘটনার দুই তৃতীয়াংশই ঘটেছে এ আকিতায়।
স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘এ এলাকায় ভাল্লুকের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই, সতর্কতার মাত্রাও সর্বোচ্চ। এ বছর বেশ কিছু হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।’
অন্য আরেকজন বলেন, ‘বড় কোনো ক্রিয়া প্রতিযোগিতা বা জাতীয় দুর্যোগে আমরা সবসময়ই সেলফ ডিফেন্স ফোর্স ব্যবহার করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে লক্ষ্য এ সেনাসদস্যদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করা।’
ভারী চেহারা, ছোট অথচ মোট পা, লম্বাটে মুখ আর গায়ে বড়বড় লোম- দেখতে খুব একটা ভয়ংকর না হলেও, শ্বাপদ বর্গের এ প্রাণীটির কবলে পড়ার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর না।
আরও পড়ুন:
২০২৩ এর ১৯ অক্টোবর। গ্যারেজের শাটার তুলতেই অপরপ্রান্তে কালো একটি ভাল্লুকের মুখোমুখি হন কেইজি মিনাতোয়ার নামের এ মিষ্টি প্রস্ততকারক। রয়টার্সকে বলছিলেন কীভাবে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে রীতিমতো প্রাণঘাতী হামলার কবলে পড়েন তিনি।
ভাল্লুকের আক্রমণের শিকার ব্যক্তি বলেন, ‘ভাল্লুকটা নীরবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষণ এভাবে চোখাচোখি হয়। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম। এক পর্যায়ে হুঁশ ফিরলে দৌড়ে পালাই।’
জাপানে ভাল্লুক আতঙ্কের আরও নজির আছে সামাজিক মাধ্যমে, অক্টোবরে এ উত্তরাঞ্চলেই ভাল্লুকের তাড়া খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৮২ বছরের এক নারী। সবশেষ গেল (বুধবার, ৫ নভেম্বর) আকিতার একটি জাদুঘরের সামনে হানা দেয় আরেক ভাল্লুক ছানা। যদিও জাদুঘর বন্ধ থাকায় অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সবকিছু মিলিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়া ভাল্লুকদের কবল থেকে স্থানীয়দের রক্ষা করতে গেল বুধবার থেকে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার। সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে আকিতার কাজুনো শহর থেকে। পাশাপাশি বাসিন্দাদের ঘন জঙ্গলে বেড়াতে যাওয়া ও গভীর রাতে ঘোরাফেরা করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কারণ রাতেই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ের আশপাশে ঘোরাফেরা করে ভাল্লুকের দল।




