আরএসএফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সুদানের, ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর আহ্বান

মসজিদের বাইরে রাখা নিহতদের মরদেহ
মসজিদের বাইরে রাখা নিহতদের মরদেহ | ছবি: দ্যা গার্ডিয়ান
0

আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনলো সংঘাত কবলিত সুদান। সংঘাতের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দায়ী করে বলছে, শান্তি আলোচনায় আরব আমিরাত থাকলে অংশ নেবে না সুদান সরকার। সংঘাত বন্ধে আলোচনা ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও। বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগের শিকার দেশটিতে গণহত্যা-গণধর্ষণসহ আরএসএফের নির্মমতা ওঠে আসছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে।

ড্রোন ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সুদানে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত আল-ফাশির শহর। মাইলের পর মাইল ভবনের ধ্বংসাবশেষ, জনশূন্য রাস্তাঘাট, কোথাও কোথাও শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় থাকা মানুষের ঢল, আর পড়ে থাকা অসংখ্য মরদেহ।

দারফুরে ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ আল-ফাশির দখলের পর পলায়নরত মানুষকে পিটিয়ে, গুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ। স্যাটেলাইট ছবি আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছে দাতব্য সংস্থাগুলো।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মাথিল্দে ভু বলেন, ‘মানুষ স্রেফ ফাঁদে আটকা পড়েছে। গুলি-বোমা থেকে বাঁচতে অনেকেই মাটিতে গর্ত খুঁড়ে লুকানোর চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বড় কথা, তারা আরোপিত মৃত্যুকে ভয় পাচ্ছেন, হত্যার শিকার হতে ভয় পাচ্ছেন। আমরা ঘরে ঘরে অভিযানের কথা শুনছি, মানুষ পালানোর চেষ্টা করার সময় তাদের গণহারে হত্যার ঘটনা শুনছি।’

সুদানের সেনাবাহিনী আর আরএসএফের আড়াই বছরের সংঘাতের জেরে দেশটিতে চলছে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগ, বলছে জাতিসংঘ। সংঘাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আল-ফাশিরের প্রকৃত পরিস্থিতি আর ভয়াবহতার মাত্রা জানা যাচ্ছে সামান্যই। এক সপ্তাহেই কমপক্ষে দুই হাজার মানুষকে হত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে আসছে গণহত্যা-গণধর্ষণসহ আরএসএফের নির্মমতার বর্ণনা।

আরও পড়ুন:

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘ঘরের দরজায় রকেট বোমা ছুঁড়ে মেরেছে তারা। সাত মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর পা ভেঙে গেলো। এরপর প্রচুর রক্তপাত হয়ে সেখানেই মৃত্যু হলো তার। ৫০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে তারা। আহত হয়েছে আরও বেশি মানুষ।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, গল্পকে হার মানানো নারকীয়তার সাক্ষী সুদান। জানা যাচ্ছে, শুধু গুলি করে নয়, গাড়ির নিচে পিষ্ট করে, জীবন্ত পুড়িয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে নারী-শিশুসহ অগণিত নিরস্ত্র মানুষকে। জাতিসংঘ বলছে, গণহত্যা আর গণধর্ষণের শহরে রূপ নেয়া আল-ফাশির শহরে দুই লাখ বাসিন্দার ভাগ্যে কী ঘটেছে, অজানা এখনও। সংঘাত বন্ধে আলোচনা ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও।

ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ লিও বলেন, ‘দীর্ঘদিন চলমান সংঘাতে এরমধ্যেই ক্লান্ত জনগোষ্ঠী। তার ওপর নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে নির্বিচার সহিংসতা, অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ এবং মানবিক সহায়তায় গুরুতর বাধা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে যুদ্ধবিরতি এবং জরুরি ভিত্তিতে মানবিক করিডোর খোলার জন্য আন্তরিক আবেদন জানাচ্ছি।’

এদিকে, আরএসএফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে সুদান সরকার সংঘাতের জন্য দায়ী করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। মিশরে নিযুক্ত সুদানের রাষ্ট্রদূত জানান, শান্তি আলোচনায় আরব আমিরাত থাকলে অংশ নেবে না খারতুম। যদিও অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পারস্য উপসাগরীয় দেশটি।

উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের লড়াই গড়িয়েছে তৃতীয় বছরে। বলি দেড় লাখের বেশি মানুষ; গৃহহীন ১২ লাখ, হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ।

ইএ