টানা ৩ দিন ধরে চলমান বিক্ষোভ আর সহিংসতায় শত শত মানুষের প্রাণ গেলেও দমানো যায়নি তানজানিয়ার সাধারণ নির্বাচনের ফল ঘোষণা। ৯৮ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে আবারও তানজানিয়ার মসনদে বসতে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন সিসিএম প্রার্থী সামিয়া সুলুহু হাসান।
যদিও বুধবারের ওই সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি প্রধান বিরোধী দল চাদেমা। নির্বাচন কমিশনের দাবি, বিরোধীদের অপপ্রচারের পরেও ভোট পড়েছে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ।
যদিও বুধবারের ঐ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশ। এছাড়া, প্রধান বিরোধী দল চাদেমার অভিযোগ, তাদের দলের প্রধান দুই প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি ক্ষমতাসীন সিসিএম। পাতানো এ নির্বাচন মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আন্দোলনের ডাক দিলে সরকারের মদতে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ।
শুক্রবার দলের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, গেল ৩ দিনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণ গেছে কয়েকশো বিক্ষোভকারীর। সহিংসতা দমাতে ও পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারফিউ’র সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশজুড়ে বন্ধ আছে ইন্টারনেট। তাই নিহত বিক্ষোভকারীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে এরইমধ্যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বিরোধীদের অভিযোগের কেন্দ্রে আছেন দেশটির সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। সাবেক প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ এ ক্ষমতা গ্রহণ করেন সামিয়া। রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন ও সেন্সরশিপ কমানোর জন্য প্রশংসা পাওয়া এ নেত্রীর বিরুদ্ধেই এখন রাজনৈতিক সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগ উঠছে।
চাদমার প্রধান নেতা তান্দু লিসুকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় আটক করার পর নির্বাচনি আচরণবিধিতে স্বাক্ষর না করায় গেল এপ্রিলে চাদমাকে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এ পুরো ঘটনায় প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান ও তার দল সিসিএমকে দায়ী করছে বিরোধীরা। আর এর জেরেই নির্বাচনের দিন থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে।
চাদেমা চেয়ারপারসন জন কিটোকা বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল ও সরকার একে একটি নির্বাচন বলে বর্ণনা করছে। কিন্তু অধিকাংশ তানজেনিয়ান এটিকে তেমনভাবে দেখছেন না। তাদের মতে এটি আসলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভান সৃষ্টি করার জন্য মঞ্চস্থ নাটক।’
এদিকে বিতর্কিত এ নির্বাচনের জেরে তানজানিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালাম থেকে কেনিয়া সীমান্তের শহর নামাঙ্গা- সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। অভ্যন্তরীণ এ সহিংসতা কেনিয়া সীমান্তে নতুন কোনো সংকট সৃষ্টি করে কী না এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান সচিব।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান সচিব রেমন্য ওমোলো বলেন, ‘মূল কথা হচ্ছে কেনিয়া যদি আইনবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নেয়, আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এ সুযোগে সবার কাছে আবেদন জানাই যেন কেউ আইন নিজের হাতে নেবেন না। প্রত্যাশিত আচরণ করুন।’
বিক্ষোভকারীদের রাজপথে ছেড়ে দেয়ার সতর্ক বার্তা দিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান সেনাপ্রধান। যদিও শুক্রবার সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি আমলে নেননি বিক্ষোভকারীরা। বিপরীতে এ আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে তানজানিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তর।




