গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইউক্রেনের ১০টির বেশি অঞ্চলের দখল নিয়েছে রুশ সেনারা। মস্কোর দাবি শুক্রবার জেলেনস্কির সেনাদের সঙ্গে ফ্রন্ট লাইনে ৮২ বার সংঘাতে জড়িয়েছে পুতিন বাহিনী। এসময় ভূপাতিত করা হয়েছে কিয়েভের এসইউ-২১ যুদ্ধবিমান।
যুদ্ধক্ষেত্রে যখন অনেকটাই ব্যাকফুটে ইউক্রেন, তখন আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে রাশিয়াকে আলোচনায় ফেরাতে চান জেলেনস্কি। শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য গঠিত জোট, কোয়ালিশন অব দ্য উইলিংয়ের বৈঠকেও মিলেছে একই আভাষ।
সম্প্রতি রাশিয়ার বড় ২টি তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার মস্কোর সমস্ত তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে কিয়েভের মিত্রদের আহ্বান করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও মনে করেন, মস্কোর ওপর চাপ বাড়িয়ে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে হবে পুতিনকে। ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিয়ে ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষা সহায়তা- বিশেষ করে বিমান ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার আহ্বান জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট। আর যুদ্ধক্ষেত্রে পুতিন সেনাদের অগ্রগতি নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান। মার্ক রুট মনে করেন, ইউক্রেনকে সামান্য কোণঠাসা করতে গিয়ে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে রাশিয়াকে।
ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুট বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে খুব সামান্য অগ্রগতি অর্জন করছেন পুতিন, আর সেই সামান্য লাভও আসছে বিরাট মূল্য চুকিয়ে। পুতিনের বিভ্রান্ত আগ্রাসনের কারণে লাখ লাখ রুশ নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছে। ইউক্রেন সাহসিকতার সঙ্গে আত্মরক্ষা করে চলেছে, আর তাদের প্রতি আমাদের সহায়তা কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘ইউক্রেনের ভবিষ্যৎই আমাদের ভবিষ্যৎ। আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসে যা ঘটবে, তা যুক্তরাজ্য এবং ন্যাটোসহ আমাদের সকল মিত্র দেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে আন্তরিকভাবে আলোচনার টেবিলে আনতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘শুধু রসনেফট ও লুকওয়েল নয়, রাশিয়ার সমস্ত তেল কোম্পানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চাপ বাড়াতে হবে। ছায়া নৌবহর, জ্বালানি অবকাঠামো ও রাশিয়ার তেল টার্মিনালগুলোর বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। শাসকদের চাপ না দিলে শান্তি ফেরানো যাবে না। আমাদের সেটাই করতে হবে।’
কিয়েভ মিত্ররা যখন লন্ডনে বৈঠক করছেন তখন দীর্ঘ পরিকল্পনা শেষে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন পুতিনের বিশেষ প্রতিনিধি কিরিল দিমিত্রিভ। নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, এই সফর প্রমাণ করে মস্কো-ওয়াশিংটন সংলাপের পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক এই প্রতিনিধির ওয়াশিংটন সফরের কারণ চলমান বাণিজ্য বৈরিতা থামাতে একটি সমাধান সূত্রে পৌঁছানো হলেও, ইউক্রেন ইস্যুতে তিনি বলেছেন, সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয় ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে স্থায়ী সমাধান চান রুশ প্রেসিডেন্ট।
সফরটি অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কিছু বৈরিতাপূর্ণ আচরণ করলেও এটি বাতিল করা হয়নি। প্রেসিডেন্ট পুতিন গতকাল বলেছেন, রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ কার্যকর নয়। তিনি জাতীয় ও নিরাপত্তা স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চান। রাশিয়ার সঙ্গে ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক ও সম্ভাবনা এখনও আছে।
রাশিয়ার মোট রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ তেল-গ্যাস খাত থেকে আসলেও, এই রাজস্ব আয় রপ্তানি নির্ভর নয়। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ কমে গেলে রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়বে মস্কোর। এখন এই চাপ ও নিষেধাজ্ঞার চাল দিয়ে পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় ফেরাতে কতোটা সফল হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা- সেদিকেই নজর থাকবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।





