পচাগলা বা বিভৎস মরদেহের সঙ্গেই সব কারবার। গলিত দেহের উৎকট ঘ্রাণ, কোথাও বয়ে চলা রক্ত, আবার কোথাও মানুষের হাড়গোড়। যে দৃশ্যে সবার গা ছমছমে ভাব, তা পরিষ্কার করতেই যেন অদ্ভূদ আনন্দ। প্লাস্টিকের বুট ও বয়লার স্যুট গায়ে জড়িয়ে এভাবেই জীবনের ২৫টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বেন জেইলস্।
বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ পেশার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। নৃশংস অপরাধস্থল, আত্মহত্যা কিংবা বিস্ফোরিত এলাকায় ডাক পড়ে তার। আবার ভয়ংকর এ কাজটি করে কোটিপতিও বনে গেছেন বেন।
নিয়মিত মানবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিজের হাতে পরিষ্কার করেন বেন। ৪৯ বছর বয়সী বেনকে অপরাধের দৃশ্য, দুর্ঘটনাস্থল, পচা মরদেহ পরিষ্কার করতে এখন আর বেগ পেতে হয় না। এ কাজে দক্ষতার জন্য বেশ পরিচিতও পেয়েছেন বেন জেইলস। ব্রিটেনের সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর তকমাও রয়েছে তার।
এক দুর্ঘটনায় লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডের একটি থিয়েটারের প্রবেশপথে মানুষের রক্তের ছড়াছড়ি। কিছু সময় পরেই যেখানে একটি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। সেই নারকীয় পরিবেশ ৩০ মিনিটের মধ্যেই ঝকঝকে করে তোলেন বেন।
আরও পড়ুন:
গোটা জীবনে বেন এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন যা বেশিরভাগ মানুষের সহ্যসীমার বাইরে। পরিষ্কার করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত, শরীরের অংশ, বাসা-বাড়ির বর্জ্য, বমি ও শ্লেষ্মা। তবে কর্মজীবনের শুরুতে যানবাহন পরিষ্কার করতেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে কয়েক জনকে নিয়ে তিনি ‘জাইলস ক্লিনিং’সংস্থার মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে এর নাম দেন ‘আলটিমা।’ প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের এ সংস্থার পরামর্শদাতা এখন বেন। ২০১০ সালে একটি প্রশিক্ষণ সংস্থা থেকে ৬০০ ‘ফ্রিল্যান্স ক্লিনারের’ একটি বিশাল দলও তৈরি করেছিলেন তিনি।
একটি ঘটনা বেনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। ঘরটিতে ছিল রক্তের ছোপ। রান্নাঘরের ড্রয়ার পর্যন্ত রক্তের ছিটে পৌঁছে গিয়েছিল। যা বেন কখনো ভুলতে পারবেন না বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান।
২০১৯ সালে সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে বেনকে। একটি ২২ মিটার লম্বা তিমি, পণ্যবাহী জাহাজে ধাক্কা খেয়ে নোঙরে আটকে গিয়েছিল। যাতে পচন ধরতে শুরু করেছিল। প্রাণীটিকে বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে জাহাজ থেকে অপসারণ করা হয়। যা বেন ও তার সহকর্মীদের জন্য ছিল ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা।
জঞ্জালকে সুন্দরে রূপ দেয়া বেন জেইলস অবশ্য স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। তবে বিশ্বের অন্যতম আপদকালীন এ ক্লিনারকে নিশ্চয়ই মিস করবে তার আপন ভুবন।




