পশ্চিম তীর দখল করলে ইসরাইলকে সমর্থন বন্ধের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
1

অধিকৃত পশ্চিম তীর দখল করলে ইসরাইল সব ধরনের মার্কিন সমর্থন হারাবে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে দখল সংক্রান্ত আইন প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পাওয়ার পর এ মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরাইল সফরে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। একইসঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

নতুন করে আলোচনায় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর। ১৯৬৭ সালে অঞ্চলটি দখলের পর এবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে তেল আবিব। বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে নেসেটে এ বিষয়ে একটি আইন প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়।

তবে, পশ্চিম তীর দখলের ইসরাইলি পরিকল্পনায় এবার বাধ সেধেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পশ্চিম তীর দখলের চেষ্টা করলে ইসরাইল সব ধরনের সমর্থন হারাবে বলেও হুমকি দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘পশ্চিম তীর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইসরাইল পশ্চিম তীরের সঙ্গে কিছুই করবে না। এ বিষয়ে চিন্তার কিছু নেই। ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে খুব ভালো করছে, এ অবস্থায় তারা এমন কিছুই করবে না বলে আমার বিশ্বাস।’

এরমধ্যেই, যুদ্ধবিরতি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ইসরাইল সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বন্ধু উল্লেখ করে গাজা শান্তিচুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন নেতানিয়াহু। এসময় ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তি কার্যকরে সহায়তার জন্য নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানান রুবিও।

আরও পড়ুন:

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানয়িাহু বলেন, ‘আপনি ইসরাইলের একজন অসাধারণ বন্ধু। আমরা এই মুহূর্তে কঠিন সময়ের মুখোমুখি। আমরা শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের এখনও নিরাপত্তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে আমি মনে করি আমরা একসাথে কাজ করতে পারি এবং একসাথে কাজ করার মধ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হবো আমরা।’

অধিকৃত পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। তেল আবিবের এমন আচরণ স্পষ্ট আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেন তারা।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা বলেন, ‘৭০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য হয়েছিল ইসরাইল। তবে, তারা এখনও আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’

এদিকে, গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও। সেখানে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে হামাস-ইসরাইল পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করেন উভয়পক্ষের প্রতিনিধিরা। হামাস সব ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর না করায় যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘে ইসরাইলি প্রতিনিধি। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান ফিলিস্তিনি দূত।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি মাজেদ বামিয়া বলেন, ‘একটি ভঙ্গুর ও অস্থির যুদ্ধবিরতিকে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে কাজ করবো। আমরা চাই সহিংসতার স্থায়ী অবসান। এটিকে কেউ ইন্ধন দিলে তা কোনভাবেই সহ্য করা হবেনা।’

ইসরাইলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ডেনন বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। সন্ত্রাস থাকাকালীন গাজার পুনর্গঠন হতে পারে না। ১৩ জিম্মির মরদেহ এখনও হামাসের হাতে রয়েছে। আমরা তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনবো এবং তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দেব। হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং তাদের স্বাক্ষরিত শান্তি পরিকল্পনাকে সম্মান করতে হবে।’

এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংকট নিরসনে দ্রুত রাফাহ ক্রসিংসহ অন্যান্য সীমান্ত খুলে দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বানও জানায় সংস্থাটি।

ইএ