ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত ৭; দখলদারি বন্ধের শর্তে অস্ত্রত্যাগে রাজি হামাস

হামাস যোদ্ধারা
হামাস যোদ্ধারা | ছবি: সংগৃহীত
0

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে ও অস্ত্রত্যাগ করতে রাজি হয়েছে হামাস। তবে তার আগে গাজায় ইসরাইলের দখলদারি অভিযান বন্ধ করতে হবে বলে জানায় সংগঠনটি। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে গাজার নিয়ন্ত্রণ চায় তারা। আর হামাসের জিম্মি মুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে, গাজায় হামলা বন্ধে ইসরাইলকে আহ্বান জানানোর পর সামরিক বাহিনীকে গাজায় হামলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এদিকে, ট্রাম্পের আহ্বানের পরও নেতানিয়াহুর নির্দেশনার আগে গাজায় রাতভর ইসরাইলি হামলায় ৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

নানা জল্পনা কল্পনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী জীবিত ও মৃত সকল ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়াসহ অস্ত্রত্যাগ করা শর্তে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।

তবে ইসরাইলি বাহিনী গাজায় তাদের দখল অভিযান বন্ধ করলেই কেবল অস্ত্রত্যাগ করবে হামাস। পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে গাজার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে চায় বলেও জানায় গোষ্ঠীটি।

সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা মূসা আবু মারজুক বলেন, গাজায় শান্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে ইসরাইলকে তাদের সেনা সরিয়ে নিতে হবে এবং গাজায় ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। আর ফিলিস্তিনি নয় এমন কাউকে গাজার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করা যাবে না। ইসরাইল দাখলদারি অভিযান বন্ধ করলে হামাসের কাছে আর কোনো অস্ত্র থাকবে না।

শুক্রবার হামাসকে শান্তি প্রস্তাবে রাজি হতে ট্রাম্পের সময় বেঁধে দেয়ার পরেই এ ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। তবে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের আংশিক এই সম্মতির বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প। নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, হামাস স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।

পাশাপাশি জিম্মিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে ইসরাইলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার কথাও বলেন তিনি। একই সাথে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাহায্যকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনটি খুবই বিশেষ, অনেক দিক থেকেই নজিরবিহীন। ধন্যবাদ জানাই সেই মহান দেশগুলোকে যারা আমাকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাহায্য করেছে। আমরা বিপুল সহায়তা পেয়েছি। সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

ট্রাম্পের আহ্বানের জবাবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে গাজায় হামলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত তেল আবিব।

হামাসের জিম্মি মুক্তির সিদ্ধান্ত ও ট্রাম্পের গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্টে জানিয়েছেন, দোহা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে, যেখানে তিনি হামাসের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

হামাসের প্রতিক্রিয়ায় ইতিবাচক অগ্রগতি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কায়রো জানিয়েছে, তারা আরব রাষ্ট্রগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবে যেন গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা যায়। হামাসের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও হামাসের প্রতিক্রিয়াকে উৎসাহিত করে, গাজার মর্মান্তিক সংঘাত বন্ধে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

হামাসের জিম্মি মুক্তির ঘোষণায় আশা প্রকাশ করেছে ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবার। আশা করছেন দ্রুতই জিম্মি মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। আর যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদও জানান তারা।

ইএ