গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবির। অনেক কষ্টে ইন্টারনেট সংযোগ জোগাড় করে চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা নিয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে দেয়া ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনছেন ফিলিস্তিনি। ভেবেছিলেন, বিশ্বমঞ্চ থেকে হয়তো যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত দেবেন নেতানিয়াহু। যদিও শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে তাকে। বুঝতে পরেছেন কোনো অবস্থাতেই সংঘাত বন্ধের বিষয়ে আগ্রহী নন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।
ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা বলেন, ‘আমরা আশায় ছিলাম। ভেবেছিলাম রক্তক্ষয়ী এ সংঘাত থামানোর কোনো না কোনো উপায় আসবে। কিন্তু যত দেখছি তত বিরক্ত হচ্ছি। হতাশ হচ্ছি। তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান।’
নেতানিয়াহু যখন জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে হামাস নির্মূলের হুশিয়ারি দিচ্ছিলেন, তখন গাজার বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালায় ইসরাইল। আল-ওয়েহদা, শাতি শরণার্থী শিবির, নাসের ও রেমালের আবাসিক এলাকাসহ হামলা হয়েছে গাজার পশ্চিমাঞ্চলেও। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির খবর মিলেছে গাজার মূল শহর। গেল ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে এই গাজা সিটিতেই সবচেয়ে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। আর গাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ইসরাইলের সেনারা ঘিরে রাখায় বাধ্য হয়েছে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে অলাভজনক সংস্থা ডক্টরস উইথআউট বর্ডারের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
এদিকে, জাতিসংঘ অধিবেশনে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় অনেক দেশের প্রতিনিধি যখন প্রতিবাদ জানিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন, তখন নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদরদপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন লাখো ফিলিস্তিনিপন্থী। এসময় সেখানে উপস্থিত হন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।
এরপর, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মার্কিন সেনাদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো বলছেন, সাধারণ মানুষকে বন্দুকের মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না। আরও বলেন, তারা যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশ পালন না করে। এ ঘটনার পর বেপরোয়া ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে সফররত কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর।
তবে, এমন পরিস্থিতিতেও গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে দাবি করেন, চলমান সংঘাত বন্ধে মধ্যপ্রাচ্যের সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গাজায় স্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে।
এদিকে, ইসরাইলি নৌ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ ফ্রিডম ফ্রোটিলা। আয়োজকরা বলছেন, ইতালির পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও, তারা ঝুঁকি নিয়েই যাত্রা অব্যাহত রাখতে চান।
ফ্রিডম ফ্রোটিলার এ অভিযান ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে, ইতালির টারমিনি স্টেশনের বাইরে একটি স্থায়ী ক্যাম্প বানাচ্ছে দেশটির একদল সমাজকর্মী। ফ্রিডম ফ্রোটিলা গাজায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এ ক্যাম্পেই অবস্থান করবেন তারা।





