গতকাল (বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবসহ বেশ কিছু জায়গায় বেজে উঠে সতর্কতামূলক সাইরেন। জেরুজালেম, ইলাতে, পশ্চিম তীরসহ দশটির বেশি অঞ্চলে সাইরেনবেজে উঠে একযোগে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছে তারা।
ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী ইলাতে হুতিদের একটি ড্রোন আঘাত হানে একটি হোটেলে। ড্রোনটি আছড়ে পরার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে আগুন ধরে যায়। যদিও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হুতি গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় আগ্রাসন বন্ধ না করলে, ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রাখবে তারা।
এদিকে, ইসরাইলি সেনাদের ট্যাঙ্ক যত অগ্রসর হচ্ছে ততই শোচনীয় হচ্ছে গাজা সিটির অবস্থা। খাদ্য ও ওষুধের সংকটে পাশাপাশি হামলার ভয়ে পালাচ্ছে লাখ লাখ বাসিন্দা। ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। যে যেভাবে পারছে জীবন বাঁচাতে ছুটে বেড়াচ্ছে।
এমন অবস্থায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব রাখা হয়। যুদ্ধ বন্ধ করে গাজার ওপর ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখার শর্ত দেওয়া হয়। বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে ইসরাইলি জিম্মিদের। তবে এ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্য দেশ পক্ষে মত দেয়।
আরও পড়ুন:
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি মরটান অরগাটাস বলেন, ‘এ খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করা অবাক হওয়ার মতো কিছু না। প্রস্তাবটি হামাসের নিন্দা জানাতে এবং ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে হামাস গোষ্ঠী বৈধতা পাবে। যা দুঃখজনকভাবে পরিষদে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।’
হামাস বলছে গাজা সিটিতে আক্রমণ চালিয়ে ইসরাইল প্রমাণ করছে তারা জিম্মিদের জীবিত বা মৃত অবস্থায় আর ফেরত চায় না। আগ্রাসন বন্ধ করে এ বিষয়ে ইসরাইলকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে তাদের ভাগ্যেও করুণ পরিণতি আছে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছে হামাস।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এ সময় তিনি জানান, পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা দ্বিরাষ্ট্র গঠনের নীতিকে নষ্ট করে ফেলবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো বলেন, ‘এ অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে জাতিসংঘ ও আর্ন্তজাতিক বাহিনীর ম্যান্ডেট মেনে সেনা মোতায়নের প্রস্তাব রেখেছে ফ্রান্স। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী চলমান প্রশিক্ষণ বাড়াতে সহায়তা করবে ফ্রান্স। এ বিষয়ে স্পষ্ট যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত করতে পারি যে এতে সবাই শান্তিতে থাকবে। এ অঞ্চলটি সুরক্ষিত হবে।’
ইসরাইলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে উঠেপড়ে লেগেছে ইউরোপের আরও দুই দেশ স্পেন ও জার্মানি। ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করার জন্য ইইউ কমিশনের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। আর জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মায়ার্জ বলেছেন, পহেলা অক্টোবরের আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জার্মানি।
এদিকে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনায় নতুন করে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। বিমান হামলার পর বেশকিছু অঞ্চলে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। হিজবুল্লাহর অভিযোগ, সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সন্ত্রাসবাদ করে যাচ্ছে ইসরাইল।





