একের পর এক গাজা শহরের বহুতল ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। বোমা ও বিমান হামলায় পুরো শহরের দখল নেয়াই তাদের উদ্দেশ্য। গত কয়েক দিনে বোমা হামলায় এ নিয়ে প্রায় অর্ধশত ভবন ও টাওয়ার ধ্বংস করেছে তারা। এ অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন শহরের লাখো বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘জানিনা কোথায় যাবো? রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হয়েছে। চারদিকে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। বাড়ি-ঘর বলতে কিছুই নেই। জীবনে বেঁচে থাকার আর ইচ্ছেও নেই। এটাকে জীবন বলে না।’
এ অবস্থায় তাঁবু টানিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেন গাজা সিটির বাসিন্দারা। তবে এতে শেষ রক্ষা হয় না তাদের। সেখানেও হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। রোববার রাতে শহরের বেশ কয়েকটি তাঁবুও উড়িয়ে দেয় তারা।
গাজার বাসিন্দারা বলেন, ‘রকেট হামলার সময় নিচে বসেছিলাম। আমার বেশ কয়েকজন আত্মীয় শহিদ হয়েছেন। এই ছোট শিশুদের কী অপরাধ। সামান্য তাঁবুও ধ্বংস করে দিতে হবে? মধ্যরাতে যখন ঘুমানোর সময়, তখন আমরা বোমার শব্দে ঘুমাতে পারছিলাম না। উত্তরাঞ্চল থেকে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখন আবার পশ্চিমাঞ্চলে নিরাপদে চলে যেতে বলছে।’
মুসলিম দেশসহ বিশ্বের সব দেশগুলোকে ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এছাড়াও গাজা শহরে ইসরাইলের এ ধরণে হামলার নিন্দা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর। যুদ্ধ বন্ধ করে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান এ দুই দেশের নেতা।
তবে শিগগিরই গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে এরইমধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ এগিয়েছে তার। নিউইয়র্ক সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ শেষ করতে চাইছি। সব বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে আলোচনা চলছে। জীবিত কিংবা মৃত সব বন্দিদের ফেরত চাই। ভালো কিছু হবে আশা করছি।’
যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে সব বন্দিদের মুক্তি দিতে হামাসকে শেষ বারের মতো হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি। জানান, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি শর্ত মেনে নিয়েছে এখন সময় হামাসের সম্মতি।
এদিকে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বিক্ষোভে নামেন হাজার হাজার মানুষ। সেসময় যুদ্ধ বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। ইসরাইলের পাশে থাকা মানে গণহত্যাকে সমর্থন জানানো। ইসরাইলের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে হবে।
গাজায় উদ্দেশে রওয়ানা দেয়া ফ্রিডম ফ্রোটিলার সহায়তা বোঝাই ৪৪ জাহাজ এরইমধ্যে তিউনেশিয়া উপকূল পৌঁছেছে। জাহাজে থাকা পরিবেশবিদ গ্রেটা থুনবার্গসহ তার সহযাত্রীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে সেখানে ভীর করেন দেশটির শত শত মানুষ।





