হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস | ছবি: সংগৃহীত
0

বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করলো ট্রাম্প প্রশাসন। অন্তত আগামী এক বছরের জন্য হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ভিসা কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর না হলে হারাবেন বৈধতা। যদিও, নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি থেকে বাদ নেই অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।

ইহুদি বিদ্বেষের দোহাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর খড়গহস্ত ট্রাম্প প্রশাসন। সরকারি হস্তক্ষেপ মানতে রাজি না হওয়ায় সবচেয়ে বড় আঘাতের শিকার বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। ২৩০ কোটি ডলারের তহবিল আটকে দেয়া এবং করমুক্তি সুবিধা বাতিলের হুমকির পর এবার আটকে দেয়া হলো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি।

বৃহস্পতিবার হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত সকল বিদেশির ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ভিসা ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশনে ইতি টানার নির্দেশ দেন মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ইহুদিবাদ উসকে দেয়া এবং চীনের ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে আঁতাতের অভিযোগও করেন তিনি।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদেশির সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার ৮শ'। ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় অংশ ছিল চীনা নাগরিক। এরপর তালিকায় ছিল কানাডা, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও জাপান। এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাস।

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জেয় গ্রিনি বলেন, ‘উন্মুক্ত আলোচনা মানসম্মত শিক্ষার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ এবং আমরাও চিন্তার অবাধ বিনিময় চাই। তবে এটি হতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঠিক মিশ্রণ। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ আমরা চাই, যেন যথাযথ ও বৈচিত্র্যময় শিক্ষা নিশ্চিত হয়। কিন্তু সমস্যা হয় যখন অর্ধেকই থাকে বিদেশি শিক্ষার্থী। তখন আলোচনায় মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির উপস্থিতি থাকে না।’

এদিকে, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষকে দেয়া চিঠিতে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত বিবরণী জমা দিলে সার্টিফিকেশন ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শর্ত অনুযায়ী গেলো পাঁচ বছরে বিদেশি শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের আন্দোলনে অংশ নিয়ে থাকলে সেগুলোর অডিও বা ভিডিও'ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করতে হবে হার্ভার্ডের।

হার্ভার্ড অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে বেআইনি উল্লেখ করে জানিয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি। সরকারের কার্যকলাপে হার্ভার্ডের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম গুরুতর বাধার মুখে পড়বে বলেও উদ্বেগ জানায় কর্তৃপক্ষ। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট নেতারাও।

চলমান পরিস্থিতিতে হার্ভার্ডের বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর না হলে হারাবেন বৈধতা। যদিও, নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি থেকে বাদ নেই অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। গবেষণার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ ও অভিজাত আটটি মার্কিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- আইভি লিগের একটি হার্ভার্ড। ক্যামব্রিজ-ম্যাসাচুসেটসসহ আইভি লিগের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের জেরে এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন বাতিল করে কলাম্বিয়া, প্রিন্সটন, কর্নেল, ব্রাউন, নর্থ ওয়েস্টার্নসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল। শঙ্কা বাড়ছে, হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক আঘাতের প্রভাব পড়বে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজস্বে।

ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় গেলো কয়েক মাসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আটক ও কয়েকশ' ভিসাও বাতিল করেছে প্রশাসন।

এএইচ