উপত্যকায় অব্যাহত স্থল অভিযানের মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১৫ মে) গাজা সীমান্তে অবস্থান নেয় ইসরাইলি ট্যাংকের বহর। দু'দিনেই ইসরাইলি বিমান বাহিনী হামলা চালায় ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে। সবমিলিয়ে বিরামহীন বোমাবর্ষণে আরো একবার মৃত্যুকূপে পরিণত গোটা উপত্যকা।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যি কঠিন। আগ্রাসী হামলা হয়েছে। মেডিকেল ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, শিশুদের হাসপাতাল, কিছুই বাদ নেই। হামলা হয়েছেও দুপুর ১টা দিকে, যখন পানি সংগ্রহের সময় ছিল। শিশু, নারী, পুরুষ কেউই রেহাই পায়নি।’
১৯৪৮ সালের মে মাসে ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রহীন হওয়ার ৭৭তম বছর পূর্ণ হয় বৃহস্পতিবার। নাকবা নামে পরিচিত ইতিহাসে ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয়ের কলঙ্কিত সে দিনটিতে নতুন করে, উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত পুরো গাজায় ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী আগ্রাসনে মৃত্যুর মিছিলে নাম উঠলো আরো দেড়শ' মানুষের।
বাসিন্দাদে একজন বলেন, ‘আমার এক বছরের ছোট বোন। গতকাল রাতেও সে আমার সাথে ছিল। ঘুমানের আগে আমাকে সে বিদায় জানিয়েছে। হয়তো সে বুঝতে পেরেছিল এটাই শেষ। ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে আল্লাহই আমাদের একমাত্র সহায়।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বলছে, গাজার ৭০ শতাংশ অঞ্চল হয় খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী, যেখানে পোকামাকড়ের মতো আটকে আছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। উপত্যকার ২১ লাখ বাসিন্দার প্রত্যেকেই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে, অনাহারে আছেন প্রতি পাঁচজনের একজন।
জানুয়ারিতে ইসরাইল-হামাস প্রথম ৪২ দিনের অস্ত্রবিরতি শেষে ২ মার্চ থেকে গাজায় জরুরি ত্রাণসহ সবধরনের পণ্য প্রবেশ বন্ধ রেখেছে ইসরাইল। ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, গাজার মানবিক পরিস্থিতি স্পর্শ করেছে ওয়াশিংটনকেও। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের আপত্তি সত্ত্বেও যুদ্ধবাজ দুই দেশের ত্রাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিস্থিতি সহজ করা সম্ভব বলে দাবি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘও।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘হামাসের অধীনে যেমন ছিল, তার চেয়ে ভালো ভবিষ্যৎ গাজার মানুষের প্রাপ্য। আমরা মনে করি, হামাস নির্মূল হলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সেখানকার মানবিক পরিস্থিতিতে আমরা স্থির থাকতে পারছি না। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহায়তায় ইসরাইলিরা একটি পরিকল্পনা করেছে, যেখানে সরবরাহকৃত ত্রাণ হামাসের হাতে যাওয়ার বা চুরি হওয়ার সুযোগ নেই।’
জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলেছি যে আমাদের মৌলিক মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলে তবেই আমরা ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেবো। বারবার আমরা উল্লেখ করেছি যে, এই নির্দিষ্ট ত্রাণ বণ্টন পরিকল্পনা আমাদের মৌলিক মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, ন্যায়পরায়ণ, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নয়। তাই এতে আমরা অংশ নেবো না।’
গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরাইলকে চাপ দেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্যরাও।
এদিকে, নাকবা দিবসে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন খোদ ইসরাইলিরা। তেল আবিব ইউনিভার্সিটিতে জড়ো হয়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আরব-ইসরাইলি ও অন্যান্য ফিলিস্তিনিপন্থিরা। হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদেও।
অন্যদিকে, নাকবা দিবসে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনি পতাকা, আর যানবাহন পুড়িয়ে দেয় ইসরাইলি দখলদাররা।





