এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক

বিদেশে এখন
0

২২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক। ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়রকে গ্রেপ্তারের জেরে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দু'দিন ধরে রাজপথে লাখো মানুষ। বিরোধীদের দাবি, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে ভোটের মাঠ থেকে মেয়র ইমামোগলু ও তার দলকেই সরিয়ে দিতে চান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

বসফরাসের তীরে ইউরোপ ও এশিয়া-দুই মহাদেশকে এক করা তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুল বিক্ষোভে উত্তাল। শহরের মেয়র ইকরাম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে দু'দিন ধরে রাজপথে লাখো মানুষ। জনসমাবেশে চারদিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইস্তাম্বুল থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজধানী আঙ্কারা, ইজমিরসহ দেশজুড়ে প্রায় সব শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘একে বড় অন্যায় মনে করি আমি। আমাদের ভোটে নির্বাচিত। যে দ্রুততায় তারা গ্রেপ্তার করেছে, এটা কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা হতে পারে না। আমি এর নিন্দা জানাই।’

আরেকজন বলেন, ‘নির্বাচনে যেসব এলাকা তারা নিতে পারেনি, সেগুলো এখন দখলের চেষ্টা করছে।’

ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের জন্য প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা। এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ৫৪ বছর বয়সী ইমামোগলুরকে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক মাস ধরে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার হন টানা দুই মেয়াদের জনপ্রিয় এ মেয়র।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করতে এবং বিরোধী মত দমনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ অভিযান চলছে বলে অভিযোগ উঠলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে এরদোয়ান প্রশাসন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘তারা এতোটাই ভারসাম্য হারিয়েছে যে আমাদের পুলিশ, বিচারক, আইনজীবীর ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হয়েছে। নিজেদের দুর্নীতি, চুরি নিয়ে মুখ না খুলে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে উসকে দিচ্ছে এবং একে রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিরোধীদের এসব নাটক দেখার সময় আমাদের নেই।’

ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেয়ায় দু'দিনে শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে তুর্কি প্রশাসন। এ অবস্থায় তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি বা সিএইচপি'র ডাকে বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলের পৌরসভা ভবনের বাইরে বিক্ষোভে যোগ দেয় বিশাল জনস্রোত।

তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল-সিএইচপির চেয়ারম্যান ওজগার ওজেল বলেন, ‘নিজেদের দাবি আদায়ে এ রাজপথ আমাদের। সহিংসতা ছাড়া, গণতান্ত্রিক উপায়ে চাপ দিয়ে অধিকার আদায় করবো আমরা। অধিকার নিশ্চিত করা এবং মেয়র ইমামোগলু আর ইস্তাম্বুলকে মুক্ত করার আগ পর্যন্ত লড়াই থামবে না।’

তুরস্কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আরো তিন বছর। তবে ২২ বছর ধরে দেশ শাসন করা ৭১ বছর বয়সী এরদোয়ান আবারও নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলে হতে পারে আগাম নির্বাচন। চলতি সপ্তাহেই এরদোয়ানের প্রতিপক্ষ হিসেবে নাম ঘোষণার কথা ছিল ইমামোগলুর। বিরোধীদের অভিযোগ, মেয়র ইমামোগলুর কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে ভোটের মাঠ থেকে তাকে ও তার দলকেই সরিয়ে দিতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

বিরোধীদের একজন বলেন, ‘যা ঘটেছে তা শুধু সিএইচপি বা ইমামোগলুর বিরুদ্ধে নয়, বিরোধী মতাদর্শী পুরো জনতার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা এটি। জনতা, সমাজ সবকিছু উপেক্ষা করছে সরকার।’

আরেকজন বলেন, ‘একটা ষড়যন্ত্র চলছে। ২৩ মার্চ সিএইচপির যে দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সেটি আটকাতে সম্পূর্ণ অন্যায্য ও অবৈধ সিদ্ধান্তে মেয়রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

এর আগে ২০১৩ সালে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী গাজি পার্ক আন্দোলন এবং ২০১৬ সালে তুর্কি সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করে এরদোয়ান প্রশাসন।

ইএ