জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, গেল এক সপ্তাহে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমটোয়েন্টিথ্রির সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৭ শতাধিক মানুষ। সাম্প্রতিক অস্থিরতা রূপ নিয়েছে ভয়াবহতম ঘটনায়। চলতি বছরে এরই মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে চার লাখের বেশি মানুষ।
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেড ক্রস জানিয়েছে, গোমার স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রতিদিন ৮০ জনেরও বেশি আহত ব্যক্তি ভর্তি হচ্ছে। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে এই হাসপাতালে হাজারের বেশি রোগী এসেছে। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এমটোয়েন্টিথ্রি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দাবি, সংখ্যালঘু তুতসি জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় লড়াই করছে তারা। আর কঙ্গো সরকারের অভিযোগ, দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ দখলে নেয়ার জন্য বিদ্রোহীদের লেলিয়ে দিয়েছে প্রতিবেশি দেশ রুয়ান্ডা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি।
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় গোমা শহর দখলের পর কিনশাসার দিকে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তাদের দাবি, বাস্তুচ্যুতদের বাড়ি ফিরতে নিরাপদ মানবিক করিডোর খোলা হয়েছে। তবে কঙ্গোর ক্ষমতাসীন সরকার অস্ত্রের মুখে এ অঞ্চলকে অনিরাপদ করে রেখেছে।
কঙ্গোর বিদ্রোহী জোটের নেতা কর্নেল নাঙ্গা বলেন, ‘কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। যাদের অস্ত্র চালানোর কোনো প্রশিক্ষণও নেই। তার নিজের উদ্দেশ্য হাসিলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিরীহ মানুষদের বিপদে মুখে ফেলে দিয়েছে।’
সংঘর্ষের তীব্রতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দ্রুত সমাধান না হলে, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। এরই মধ্যে চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে কঙ্গোর বেশ কয়েকটি অঞ্চলে। বাসিন্দারা ভুগছেন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের অভাবে ।
চলমান সংঘাতে বন্ধ হয়েছে গোমা শহরের বিশুদ্ধ পানির উৎস। বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছেন হ্রদের পানি।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পানির জন্য এখন আমাদের ভরসা এই হ্রদ। দুই একদিনের মধ্যে পানি সরবরাহ ঠিক না হলে আমাদের কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
আরেক জন বলেন, ‘আমরা এই সংঘাতের শেষ চাই। আমরা অনেক কষ্টে আছি। খাবার ও পানির অভাবেই আমরা অনেকে মারা যাব।’
রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যে চলমান সংকটকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন মার্কিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি সংঘাত মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। রুয়ান্ডার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির আবেদনও জানান নেতারা। এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাধ্যমে বৃহত্তর সংঘাত এড়াতে সব ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের শান্তি অভিযানের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জিন-পিয়ের ল্যাক্রোইক্স বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর বর্তমান অবস্থায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। এই সংঘাত কেবল কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। অতীতের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, জাতিগত সংঘাত বিস্তৃত হয়ে আঞ্চলিক সংঘাতের রূপ নেয়। এটি এড়ানো এবং শত্রুতা বন্ধ করার জন্য সমস্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো অত্যন্ত জরুরি।’
বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন কঙ্গোর জনগণ। বেসামরিক নাগরিকরা নিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। এদিকে, বিদ্রোহীদের আগ্রাসন ঠেকাতে বুকাভু শহরে জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ। শহরকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান বাসিন্দারা।