গোমা শহর এম-২৩ এর দখলে, কঙ্গোতে বাড়ছে অস্থিরতা

বিদেশে এখন
0

গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় গোমা শহর এখন বিদ্রোহীগোষ্ঠী এম টোয়েন্টি থ্রির দখলে। তাদের আগ্রাসনে পালাচ্ছেন হাজার হাজার বাসিন্দা। যা দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকারময় সময়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এমন পরিস্থিতির জন্য রুয়ান্ডাকে দোষারোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। আফ্রিকার দেশগুলোর জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে কেনিয়া। এদিকে, শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে গোটা দেশজুড়ে।

গেল ২১ জানুয়ারি থেকে বিদ্রোহীগোষ্ঠী এম টোয়েন্টি থ্রি গোমা শহরের প্রধান সরবরাহ রুট মিনোভা এবং উত্তরের কিভু প্রদেশের বেশকিছু অঞ্চল দখলে নিয়েছে। বিদ্রোহীরা বন্ধ করে দিয়েছে রাস্তাঘাট ও আকাশসীমা। গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় সব ফ্রন্টেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এম টোয়েন্টি থ্রি। শুধু তাই না, দেশটিতে অবস্থানরত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী সদস্যদের ওপরও চলছে হামলা।

এরইমধ্যে জাতিসংঘ কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এতে কঙ্গোজুড়ে উত্তেজনা আরো বেড়েছে। শান্তিরক্ষী নিহতের ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে আছেন তারা। জাতিসংঘের আশঙ্কা বিদ্রোহীদের এই লড়াই ধীরে ধীরে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে।

এদিকে, বিদ্রোহীদের আগ্রাসনের মুখে শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। কঙ্গোর শান্তির জন্য গোমা শহরের গির্জায় জড়ো হয়ে প্রার্থনা করেনও শহরবাসী।

শহরবাসীদের একজন বলেন, ‘আতঙ্কে আমরা কাজে যেতে পারছি না। সবাই বাড়িতে বসে আছি। এখন সৃষ্টিকর্তাই আমাদের শেষ ভরসা।’ 

আরেকজন বলেন, ‘আমাদের একটাই চাওয়া। বিদ্রোহীগোষ্ঠী এম টোয়েন্টি থ্রির পরাজয় এবং তারা যেনো গোমা ছেড়ে চলে যায়। প্রতিদিন ঘরবাড়ি হারিয়ে খুব কষ্টে আছে বাসিন্দারা।’

দেশটির এমন পরিস্থিতির জন্য প্রতিবেশি রুয়ান্ডাকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বিদ্রোহীদের জন্য রুয়ান্ডার সমর্থন বন্ধের আহ্বানও জানানো হয়। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাতিসংঘে রুয়ান্ডার প্রতিনিধি।

জাতিসংঘে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিনিধি ডরোথি শেয়া বলেন, ‘কঙ্গোতে সশস্ত্র সংঘাত, অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এই পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে সব ধরনের সহায়তা করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।’

কঙ্গোর জাতিসংঘ মিশনের প্রধান বিন্তু কেইতা বলেন, ‘কঙ্গোতে সব ধরনের সহায়তার পরও এম টোয়েন্টিথ্রি বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যা জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করছে। রাস্তাঘাট ও বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়ায় মানবিক সহায়তাও হুমকির মুখে আছে।’

রুয়ান্ডা ও কঙ্গোকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। কঙ্গোর সংকট মোকাবিলায় পূর্ব আফ্রিকা ইউনিয়নকে একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের আহ্বানও জানান তিনি।

কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি পূর্ব আফ্রিকার জনগণ ও সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয়। গোমায় আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়াসহ চলমান সামরিক পদক্ষেপের ফলে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে সংঘাত বন্ধ করে শান্তির পথে আসতে হবে সবাইকে।’

সাম্প্রতিক ঘটনাকে কঙ্গোর ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দিন বলে অভিহিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কঙ্গোর সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফ্রান্স।

তুতসি আদিবাসী নেতৃত্বাধীন এম টোয়েন্টি থ্রি গোষ্ঠী ২০২১ সাল থেকে মধ্য আফ্রিকার দেশটির পূর্বে নতুন করে বিদ্রোহ শুরু করে। কঙ্গো সরকারের অভিযোগ, তাদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশি দেশ রুয়ান্ডা।

ইএ