বিদেশে এখন
0

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: উল্লাসে মেতেছে পশ্চিমা দেশগুলো!

১৫ মাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশে রাজপথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। ইরান, জর্ডান কিংবা সিরিয়া নয়, উল্লাস করছেন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলোও। গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলকে রাজি করাতে অনেক বেশি দেরি করে ফেললেও ফিলিস্তিনের সমর্থকদের দাবি, ইসরাইল যেন হামাস নির্মূলের নামে এই গণহত্যা আর শুরু করতে না পারে, সেদিকে, সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে পশ্চিমা আর আরব বিশ্বকে।

কিছুদিনের জন্যে হলেও বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙবে না গাজাবাসীর। সারাক্ষণ থাকতে হবে না হামলা আতঙ্কে। সশস্ত্র সংগঠন হামাস নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে ১৫ মাসের ভয়াবহ আগ্রাসনের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে এসেছে ইসরাইল ও হামাস। নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার পর যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনিদের জন্য উচ্ছ্বাসে রাস্তায় নেমেছেন বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ।

গাজা উপত্যকায় বন্ধ হচ্ছে ইসরাইলি আগ্রাসন, এই খুশিতে ফিলিস্তিনের সমর্থকরা দখলে নিয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরের রাজপথ। হাজার হাজার মানুষ ইরান আর ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে অংশ নেন উদযাপনে। অনেকের হাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইল বিরোধী প্ল্যাকার্ড। তারা বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি মানে ইরানের প্রতিরোধ অক্ষের জয়, ইসরাইল পরাজিত হয়েছে।

ইরানের বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘ইসরাইল যদি শর্তগুলো মেনে চলে, তবেই মঙ্গল। কিন্তু ইসরাইলকে আবারও সেনা মোতায়েন আর হামাসকে হামলার সুযোগ দেয়া যাবে না।’

আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাত নিয়ে রীতিমতো খেলছে। ইরান বরাবরই বলে আসছে, ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল। পশ্চিমাদের সমর্থন ছাড়া ইসরাইল একদিনও যুদ্ধ করতে পারতো না।’

স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের কাছ থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া সিরিয়ার সাধারণ মানুষও গাজায় যুদ্ধবিরতি উদযাপন করেছেন রাজপথে নেমে। সঙ্গে ছিলেন ফিলিস্তিনের শরণার্থীরাও। গাজায় যুদ্ধবিরতি উদযাপিত হয়েছে জর্ডানেও।

ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের একজন বলেন, ‘ফিলিস্তিনের পরিবারগুলো কত খুশি বুঝতে পারছি। আমি সিরিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে বলছি, ভাইদের সঙ্গে এই জয় উদযাপন করতে চাই। সব মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ন্যায় হওয়া উচিত।’

আরেকজন বলেন, ‘কুইনেত্রা আর গোলান মালভূমি থেকেও সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে ইসরাইলের। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলবো, আমাদের দেশ থেকেও ইসরাইলকে সরে যেতে বলুন।’

কানাডায় ফিলিস্তিনের সমর্থকরা টরেন্টোতে ইসরাইলি কনসুলেটের সামনে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উল্লাস করেন। তারা বলেন, এই চুক্তি অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল, ইসরাইল গণহত্যা চালিয়ে যেতেই এতদিন চুক্তি করেনি। এখন ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

এই যুদ্ধবিরতিতে শান্তি পেয়েছি। কিন্তু ১৫ মাস অনেক সময়, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, এতো ক্ষয়ক্ষতি, এরপর এসে যুদ্ধবিরতি। এরপরও বলবো, এটার দরকার ছিল।

এদিকে, তীব্র ঠাণ্ডায় যেখানে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানই এবার হবে ক্যাপিটল হিলের ভেতরে, সেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে উল্লাস প্রকাশ করে রাজপথে নেমেছেন নিউইয়র্কের ফিলিস্তিনের সমর্থকেরা। এই যুদ্ধ যেন শুরু না হয়, সেদিকে পশ্চিমা বিশ্বকে নজর রাখার আহ্বান জানান তারা।

নিউইয়র্কের ফিলিস্তিনের সমর্থকদের একজন বলেন, ‘কেউ চায় না তার সন্তানের মৃত্যু হোক। বন্দিদের ফেরত চাই। নেতানিয়াহু আর তার দল এখন বেগতিক অবস্থায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে তাকে আরও চাপে ফেলবে।’

আরেকজন বলেন, ‘১৫ মাসের এই গণহত্যা মেনে নেয়ার মতো না। ফিলিস্তিনের মানুষকে সমর্থন করি। দেশে দেশে এই গণবিক্ষোভই যুক্তরাষ্ট্রকে অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করছে। আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্র এই গণহত্যায় জড়িত।’

যুদ্ধবিরতি কার্যকরে সন্তোষ জানিয়েছে বন্দিদের পরিবারের সদস্যরাও। এদিকে, যুদ্ধবিরতি রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার একদিনেই ইসরাইলি বর্বরতায় উপত্যকায় প্রাণ গেছে শতাধিক ফিলিস্তিনির। রোববার থেকে কার্যকর হবে দেড় মাসের যুদ্ধবিরতি।

ইএ