মাকাস দাসিগেনিস, ক্যালিফোর্নিয়ার ৬৯ বছর বয়সী এই বাসিন্দা বুঝতে পেরেছিলেন, ইটন ফায়ার যেভাবে মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তাতে আগুনের তার বাড়ি গিলে খেতে সময় লাগবে কিছুক্ষণ। আগুন ছড়িয়ে পড়ায় এলাকা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি আগেই। কিন্তু সংবাদ দেখে সিদ্ধান্ত নেন, বাঁচাবেন নিজের বাড়ি।
তিনি বলেন, সরে গিয়েছিলাম, ‘কিন্তু খবর দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টাই। কিন্তু আশেপাশে কেউ ছিল না। কাজটা ভয়ংকর ছিল। সেনাবাহিনীতে বলতে শুনি, যুদ্ধে যাওয়া আগে এমন পরিস্থিতি থাকে। আগুনের ভেতর এসে মনে হলো, নিজের বাঁচতে হবে, বাড়িও বাঁচাতে হবে।’
দাবানলের গ্রাস থেকে নিজের বাড়ি বাঁচানোর কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। আশপাশে বিদ্যুৎ বা পানির ব্যবস্থা ছিল না। দাসিগেনিস তার জেনারেটরে পুরোনো পাম্প বসিয়ে প্রতিবেশীর সুইমিং পুল থেকে পানি ছিটিয়ে সমানে ছুড়তে থাকেন আগুনে। এই যুদ্ধ করে যেতে হয় টানা ছয় ঘণ্টা। এরপরই নিজের বাড়িসহ আরও দুটি বাড়ি বাঁচাতে সক্ষম হন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি পাগল না, এখানে মরতেও আসিনি। ভালোবাসা থেকে এসেছি। না আসলে মনে হতো চেষ্টাই করলাম না।’
ইটন আর প্যালিসেডসন ফায়ার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও শেষ হয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার স্থাপনা।
এদিকে, স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জন কারের বাবা মায়ের দেয়া বাড়ি প্যাসিফিক প্যালিসেডস। চলতি সপ্তাহের প্যালিসেডস দাবানল সবকিছু উজাড় করে নিয়ে গেলেও গুটিকয়েক বাড়ির মধ্যে এটি রয়েছে অক্ষত। ৬৫ বছর বয়সী জন কার একসময় বৈমানিক থাকায় অগ্নি নির্বাপণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও নিজের বাড়ি রেখে এলাকা ছেড়ে যাননি তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিধ্বংসী দাবানল ছিল, এতো বছর ধরে এখানে আছি। এখানে আমার ঘর। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাবে মেনে নিতে পারছিলাম না।’
বাবা মায়ের শেষ স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় পানি দিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন বিধ্বংসী এই আগুনের সঙ্গে। যখনই বাড়ির পেছনের অংশ পর্যন্ত চলে আসে আগুন, বেড়া দিয়ে আর পানি দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার। তার আক্ষেপ, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যতোটুকু তিনি করেছেন, এটুকুও করেনি লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিস। এখন প্রতিবেশীদের কাছে কার হয়ে গেছেন হিরো।
ভয়ংকর এই দাবানল ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে রেখে গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চল। উপকূলের হাইওয়ে ওয়ানের প্রায় সব ঘরবাড়ি এখন অন্তঃসারশূন্য। শুধু দাঁড়িয়ে আছে ইট-পাথরের কাঠামো। আগুন এখনও থেমে থেমে জ্বলছে অনেক স্থানে। বায়ুদূষণের কারণে দাবানল কবলিত এলাকাগুলোতে শ্বাস নেয়াই কঠিন হয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে এখনও জ্বলছে ছয়টি দাবানল।