বিদেশে এখন
0

লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুনে ১১ জনের প্রাণহানি, ক্ষতিগ্রস্ত দেড় লাখ মানুষ

ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দাবানলে রূপ নিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুন। সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে আকু ওয়েদার। পাঁচটি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্যালিসেডস আর ইটনে এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে ৯২ থেকে ৯৭ শতাংশ আগুন। দাবানলে আশ্রয়হীন দেড় লাখের বেশি মানুষের খাবার-পোশাকের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এ পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ১১ জনের। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার রাত থেকে আবারো বাতাসের গতি বৃদ্ধি এবং দাবানল পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন।

টানা চারদিনের চেষ্টার পরও আগুন নির্বাপিত না হয়ে উল্টো অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এগিয়ে আসছে। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে তাই শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে পিছু হটছেন লেলিহান শিখার সামনে অসহায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

টানা তিনরাত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে মাইলের পর মাইল এলাকা ছারখার করেও শক্তি হারায়নি অগ্নিকুণ্ড। পাঁচটি এলাকায় আগুন জ্বলতে থাকলেও বাতাসের গতি নেমে এসেছে ঘণ্টায় ২০ থেকে ৫০ মাইলের মধ্যে। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত থেকে বাতাসের গতি আবারও বেড়ে ঘণ্টা ৮০ মাইলে পৌঁছাতে পারে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। এতে আগুনের তীব্রতাও বাড়বে বলে শঙ্কিত প্রশাসন। দাবানল পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কায় তাই এখনও জারি রয়েছে লাল পতাকা সতর্কতা।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘এটা গ্যারেজ ছিল। কিন্তু এর ওপর ছিল আমাদের পরিবারের থাকার জায়গা। পেছনে রান্নাঘর, সেখানে একটা আস্ত ফ্রিজ পুরোটা গলে একটা ছোট্ট দলায় রূপ নিয়েছে।’

স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত লিডিয়ায় ৭৫ শতাংশ, হার্স্টে ৩৭ এবং কেনেথে ৩৫ শতাংশ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসে। সবচেয়ে বড় দুই দাবানল- প্যালিসেডসের মাত্র আট শতাংশ এবং ইটনে তিন শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে ফায়ার সার্ভিস । কিছু এলাকায় আগুন নিভলেও বাসিন্দাদের এলাকায় না ফিরতে সতর্ক করেছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত সবমিলিয়ে আগুন গ্রাস করেছে প্রায় ৪০ হাজার একর এলাকা। বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি ভবন ও স্থাপনা। আকু ওয়েদার বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই দাবানল।

আকু ওয়েদারের প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার বলেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণে বাতাসের কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, অর্থের অঙ্কে তা ১৩ হাজার ৫শ' থেকে শুরু হয়ে ১৫ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। লস অ্যাঞ্জেলেস মহানগর জুড়ে এই দুর্যোগের ভয়াবহতা কতটা, তা হয়তো এই অঙ্কে কিছুটা বোঝা যায়।’

আগুন থেকে প্রাণে বাঁচতে দেড় লাখের বেশি মানুষ ছেড়েছেন নিজেদের বাড়িঘর। টিকটকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে এক হয়ে সমন্বিতভাবে দুর্গতদের জন্য খাবার, পোশাক আর পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় জরুরি জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

স্বেচ্ছাসেবীদের একজন বলেন, ‘সব শ্রেণির মানুষ আসছেন। তাদের খেতে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত ৬শ'র বেশি মানুষকে খাইয়েছি আমরা। তাদের দুঃখের কথা শুনছি। কীভাবে তারা আশ্রয় হারিয়েছেন। খুব কষ্টের পরিস্থিতি।’

দাবানলে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ফের জারি রয়েছে নৈশ কারফিউ। লুটপাট ঠেকাতে টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই শতাধিক সদস্য।

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডোনেল বলেন, ‘কারফিউ লঙ্ঘনের শাস্তি এক হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা অথবা সর্বোচ্চ কারাদণ্ড অথবা দু'টোই।’

লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের সহ-প্রধান ডোমিনিক শোই বলেন, ‘লুটপাট ঠেকাতে আমাদের নীতি 'জিরো টলারেন্স'। দুর্যোগকবলিত এলাকায় লুটপাট বা কোনো ধরনের সুযোগ কেউ নিলে তা সহ্য করা হবে না। বিপদগ্রস্ত লুটপাট বা যেকোনো অপরাধ করতে গিয়ে কেউ ধরা পড়লে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে।’

এদিকে, আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর। যদিও পানি দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের এবারের দাবানল নেভানোর মতো অবকাঠামো শহরে ছিলই না, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি সমতা ও অভিযোজন বিশেষজ্ঞ এডিথ ডি গুজম্যান বলেন, ‘বাস্তবতা হলো এই যে আমাদের যে নগর পানি ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান, সেটি দাবানল মোকাবিলায় সক্ষম- এমনভাবে নকশাই করা হয়নি। আগুনে জ্বলতে থাকা পুরো পাহাড়ি এলাকাজুড়ে পানি ঢালার সক্ষমতাও আমাদের নেই। আর এবার তো আমরা যে ভয়াবহ ঘটনাবলি দেখছি, তা নজিরবিহীন।’

দাবানলে দগ্ধ লস অ্যাঞ্জেলেসকে যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সতর্ক করেছেন, বাড়তে পারে প্রাণহানি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘গতকাল এই সময়েও আগুন প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। অনেকটা পথ চলা এখনও বাকি আমাদের। বাতাসের বেগ এ সময়ে কিছুটা কম থাকলেও আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত তা বিপজ্জনকই থাকবে বলে ধারণা করছি। তাই যত দ্রুত সম্ভব, আগুন পুরোপুরি নেভানোর চেষ্টায় অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি আমরা।’

তীব্র বাতাস, খরা আর পুরোনো বাড়িঘর দাবানলের এ ভয়াবহতাকে অনিবার্য করে তুলেছে, বলছেন বিশ্লেষকরা। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য প্রশাসনের প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেও সমালোচনা করছেন অনেকে।

ইএ