গাজার পাশাপাশি লেবাননজুড়ে যখন নজিরবিহীন বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল, ঠিক তখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে 'সামিট ফর ফিউচার' শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এসময় তিনি দাবি করেন, ইসরাইলি শান্তিপ্রিয় জাতি, সীমান্তে হামলা চালিয়ে তাদের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলা হচ্ছে। অথচ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) একদিনেই সীমান্তে সেই ইসরাইলের ছোড়া সমরাস্ত্রে প্রাণ চলে গেছে লেবাননের অন্তত ৫শ’ মানুষের।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরুর ঠিক আগেই গাজার পাশাপাশি লেবাননে একযোগে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরাইল। যে কারণে সামিট ফর ফিউচারের দ্বিতীয় দিনে অংশ নেয়া বিশ্বনেতারা ইসরাইলের সমালোচনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘কোন সদস্য দেশের অধিকার নেই সীমান্ত নিয়ে সংঘাতে জড়ানোর।’ সম্মেলনে লেবাননের পার্লামেন্ট সদস্য জানান, ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘাতে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে লেবাননের সাধারণ মানুষ।
লেবাননের সংসদ সদস্য বাহিয়া এল হারিরি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। খুব স্পর্শকাতর সময়ে এই সম্মেলন হচ্ছে। মানবাধিকার নিশ্চিতে এখনই কাজ করতে হবে। ইসরাইল যা করছে, তাতে আন্তর্জাতিক শান্তি নষ্ট হচ্ছে। আশা করি, জাতিসংঘে বৈরুতের সাধারণ মানুষ নিয়ে কথা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘জাতিসংঘের নীতি সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক সম্প্রীতি, স্বাধীনতা রক্ষা। কোন সদস্য দেশের এই অধিকার নেই, অন্য দেশের সীমান্ত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। অন্য দেশের সঙ্গে স্বৈরতন্ত্র আমরা সহ্য করবো না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়ে কোন চুক্তি লঙ্ঘন করা যাবে না। বিশ্বের এখন বহুপাক্ষিক নীতিই প্রয়োজন।’
লেবাননে হামলার তীব্র নিন্দা জানায় ফ্রান্সসহ অংশ নেয়া অন্যান্য বিশ্ব নেতা। এসময় গাজায় গণহত্যা চলছে উল্লেখ করে ইসরাইলের কড়া সমালোচনা করেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী। ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় ভেনেজুয়েলা। গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান ইরানের প্রেসিডেন্টও। পাশাপাশি বিশ্বে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথাও বলেন তিনি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আজকে আমরা ন্যায় চাইতে একত্রিত হয়েছি। তবে জাতিসংঘের নীতিতে অবশ্যই যুদ্ধ সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি দারিদ্র্য আর ক্ষুধামুক্তির বিষয় থাকা উচিত। মধ্যপ্রাচ্যকে অস্ত্র ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই। গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। এখানে কেউ যুদ্ধবন্ধের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।’
সম্মেলনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, জাতিসংঘের পুনর্গঠন প্রয়োজন, বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের। অনেক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলেও নিরাপত্তা পরিষদে সেগুলো আটকে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যে কারণে বৈশ্বিক সংঘাতে নেতৃত্ব দিতে তুরস্ক ব্যর্থ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।