বিদেশে এখন
0

সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দিতে চায় জাপান

সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দিতে চায় জাপান। এতে কর্মীরা পরিবারকে সময় দিতে পারবে। এদিকে, জাপানে চাকরি ছেড়ে দেয়া বা পদত্যাগপত্র জমা দেয়া খুবই জটিল বিষয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন কাজ করতে বাধ্য হন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কর্মীরা এখন ছুটছেন পদত্যাগে সহায়তা করা বিভিন্ন সংস্থার কাছে। তবে, নিম্ন জন্মহারের কারণে দেশটিতে শ্রমিক সংকট প্রকট হচ্ছে।

কঠোর পরিশ্রমী জাতি হিসেবে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত জাপান। এবার কর্মীদের জন্য চার দিন অফিস করার নিয়ম চালুর কথা ভাবছে দেশটির সরকার। ২০২১ সালে সরকারিভাবে এই প্রস্তাব করা হলেও, বাস্তবায়নে দেখা দেয় ধীরগতি। মাত্র ৮ শতাংশ কোম্পানি এই প্রস্তাবে রাজি হয়। এবার নতুন করে এই নীতি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে জাপান প্রশাসন।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটিতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শ্রমসংকট। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হওয়ায় বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। আর এতে ভুক্তভোগী হচ্ছেন চাকরিজীবীরা। কারণ, জাপানে সাধারণত কর্মঘণ্টা সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা অফিস এবং কাজের প্রচণ্ড চাপে অবসাদে ভুগছেন অনেকে।

জাপানের ২০২৪ সালে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৪০ লাখ রয়েছে আর ২০৬৫ সালে কমে দাঁড়াবে ৪ কোটি ৫০ লাখে।

জাপানে কর্মস্থল ছাড়া বা ছুটি নেয়া বেশ জটিল। তবে এরচেয়ে বেশি জটিল পদত্যাগপত্র জমা দেয়া। তাই প্রতিষ্ঠানের ওপর অসন্তুষ্টি থাকলেও, সহজে কেউ চাকরি ছাড়তে পারেন না। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের এই সংস্কৃতিকে দেশটিতে খুবই অসম্মানের চোখে দেখা হয়। ঐতিহ্যগতভাবেই কর্মীরা দশকের পর দশক একই নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করে যাচ্ছেন।

পদত্যাগপত্র জমা দেয়ারও সাহস নেই বহু মানুষের। নিয়োগকর্তারা পদত্যাগপত্র ছিড়ে ফেলে এবং কর্মচারীদের বাধ্য করেন চাকরিতে রাখতে। এমনকি কর্মীদের বাসায় গিয়েও কর্তারা হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগকর্তা বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করারও সুযোগ নেই কর্মীদের।

পদত্যাগে আগ্রহী, কিন্তু ভয়ের কারণে পারছেন না, জাপানে এমন কর্মীদের জন্য সম্প্রতি গড়ে উঠেছে পদত্যাগে সহায়তাদানকারী বেশকিছু সংস্থা। এসব সংস্থা বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে কর্মীরা এখন এসব প্রক্সি ফার্মগুলোর পেছনে ছুটছেন। করোনা মহামারির পর জাপানে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণ। গত বছর শুধু টোকিওতেই আবেদন জমা পড়েছে ১১ হাজার।

এজেন্টদের নির্ধারিত পূর্ণকালীন চাকরিজীবীর জন্য ফি ২২ হাজার ইয়েন আর খণ্ডকালীন চাকরিজীবীর জন্য ফি ১২ হাজার ইয়েন ধরা হয়।

জাপানে দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার সংস্কৃতি বজায় রয়েছে। অতিরিক্ত কাজের চাপে প্রতি বছরই মারা যান বহু কর্মী। কাজের বাজে পরিবেশ, মানসিক চাপ, কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের জন্য বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্ত করেছে দেশটি শ্রম সংস্থা। ২০১৭ সালে ৩৭০টিরও বেশি কোম্পানিকে এই তালিকায় রাখা হয়। জাপানের স্বাস্থ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত এক বছরে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার কারণে আত্মহত্যা ও অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন ৫৪ জন। দুই দশক আগেও এই সংখ্যা ছিল ১৬০। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন কর্মীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় মাসে দেড় থেকে ২০০ ঘন্টা অতিরিক্ত সময় কাজ করা।

বার্ধক্যজনিত জনগোষ্ঠীর আধিক্য এবং নিম্ন জনসংখ্যার হার জাপানের কর্মীদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই অবস্থা পরিবর্তনে এগিয়ে এসেছেন তরুরা। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও তাদের পদত্যাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে জাপানে শ্রম আইন থাকলেও, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সেই আইনকেও করে তুলেছে কঠিন।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর