১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা এলডিপি পাঁচ দশকেরও বেশি সময় জাপানের ক্ষমতায় ছিল। ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে দলটি। গত দেড় দশকের শাসনামলে একের পর এক কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল এলডিপি। রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ নিয়ে দুর্নীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ভোটাররা তাদের প্রত্যাখ্যান করে।
জাপানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডায়েটে এলডিপি ও তাদের শরিক কোমেইতো মিলে পেয়েছে ২১৫টি আসন। প্রধানমন্ত্রী শিগেরুই ইশিবার দল আগের নির্বাচনে জিতেছিল ২৭৯টি আসনে। ৪৬৫টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনে দরকার ২৩৩ আসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় প্রধানমন্ত্রী ইশিবার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরুই ইশিবা বলেন, ‘দলের এমন বিপর্যয় খুবই দুঃখজনক। এই ফলাফলকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এখান থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর অন্যতম বড় কারণ রাজনৈতিক ও আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে জনগণের সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ক্ষোভ দূর হয়নি।’
অন্যদিকে বড় চমক দেখিয়েছে প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান বা সিডিপিজে। তাদের আসনসংখ্যা ৯৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৮। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বাকি দলগুলোর সঙ্গে জোট বেধে সরকার গঠনে আগ্রহী তারা।
বিরোধী দল সিডিপিজের নেতা ইয়োশিহিকো নোদা বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনই জাপানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংস্কার। এখন অন্য দলগুলোকে আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানাবো। কীভাবে সরকার গঠন করা যায় তা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, সরকার গঠনে জোটবদ্ধ হতে ৩০ দিন সময় পাবে দলগুলো। ছোট দলগুলো এবার যথেষ্ট আসন পেয়েছে। ফলে আলোচনায় তারাও ভূমিকা রাখবে।
ভোটের ফল আসার পর নিক্কেই শেয়ার বাজারের সূচক বেড়েছে প্রায় ১.৫ শতাংশ। আর ডলারের বিপরীতে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের মান কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এক মার্কিন ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ১৫৩ ইয়েন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথও গ্রহণ করেননি শিগেরুই ইশিবা। নির্বাচিত হওয়ার তিন দিনের মাথায় আগাম নির্বাচনের ডাক দেন তিনি। এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করতে পারেন ইশিবা। ফলে, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেল।