সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে চিটচ্যাটের মাধ্যমে দীর্ঘ দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ট্রাম্পের এ সাক্ষাৎকার নেন মাস্ক। যদিও, নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাক্ষাৎকারটি সরাসরি প্রচার শুরু হয়।
সাইবার হামলার জেরেই এই বিলম্ব বলে মনে করছে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। সাক্ষাৎকারে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস, তাঁর রানিং মেট টিম ওয়ালজ, ক্যাপিটাল হিলে হামলা, ট্রাম্পের ওপর হামলাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
ধনকুবের উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে দীর্ঘ দুই ঘণ্টার সাক্ষাৎকারের পুরো সময়জুড়েই বেশ বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই দেখা যায় খ্যাপাটে বলে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সরাসরি প্রচারিত সোমবারের এ সাক্ষাৎকার কারিগরি ত্রুটির কারণে শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ৪০ মিনিটের বেশি সময় পর।
সাক্ষাৎকার বন্ধের চেষ্টায় সংশ্লিষ্ট সার্ভার বা নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীরা একযোগে এক্সে প্রবেশ করে ট্রাফিকের বন্যা বইয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মাস্ক। যদিও অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এতো বিপুলসংখ্যক মানুষের সাক্ষাৎকার দেখার চেষ্টাকে অবশ্য ইতিবাচক উল্লেখ করে মাস্ককে স্বাগত জানান ট্রাম্প। এক হিসাবে দেখা গেছে, দীর্ঘ এ সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে শ্রোতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখে।
প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হিসেবে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী দৌড়ে নাম লেখানোর পর, জনমত জরিপ, তহবিল সংগ্রহ আর খবরের শিরোনামে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে গেছেন ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস। শিকাগোতে আগামী সপ্তাহে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের পর তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন সময়েই তৃতীয় শ্রেণি, অযোগ্য, কট্টর বামপন্থি উন্মাদ এমন নানা নেতিবাচক বিশেষণে কামালাকে আখ্যায়িত করেন ট্রাম্প। সাবেক প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এতোদিন বয়সের কারণে তুলোধুনো করলেও তার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো নিয়ে সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ ঝাড়েন সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট চাই না। তাকে চাই না। তিনি অযোগ্য। ভিন্ন রূপে বাইডেনের মতোই খারাপ তিনি। এই পুরো নাটক শুরু হওয়ার পর থেকে একটা সাক্ষাৎকারে অংশ নেননি তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এটা একটা অভ্যুত্থান, কারণ তিনি নির্বাচন থেকে সরতে চাননি।’
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পরই প্রকাশ্য সমর্থন জানান বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক। ২০২০ সালের নির্বাচনে তার সমর্থন ছিল ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি। রয়টার্স বলছে, বরাবরের মতোই ট্রাম্পের এ সাক্ষাৎকার ছিল একের পর এক অভিযোগ, ব্যক্তিগত আক্রমণ আর অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা দাবিতে ভরপুর। ট্রাম্পকে কথা চালিয়ে যেতে দেয়া মাস্কও অসত্য বা বিভাজন সৃষ্টিকারী বক্তব্যগুলোর কোনো বিরোধিতা করেননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যদি আপনি ইহুদি হন এবং ইসরাইলে বিশ্বাস করেন, কিংবা ইসরাইলপন্থি কাউকে চিনে থাকেন, আর তারপরেও কামালাকে ভোট দেন, তা হবে বাইডেনের চেয়েও খারাপ। বাইডেন খারাপ। কিন্তু কামালাকে ভোট দিয়ে আপনার মাথা পরীক্ষা করতে হবে।’
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও ট্রাম্প সমর্থকের ইলন মাস্ক বলেন, ‘তার মানে আমরা অনেক বড় ঝামেলার মধ্যে আছি যদি কামালা প্রশাসন দায়িত্ব নেয়। এটাই আমার সৎ মতামত। দেশের ভালোর জন্য এই নির্বাচনে আপনার জয় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি আমি।’
অভিবাসী ইস্যুতে ট্রাম্প দাবি করেন, প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ নিজেদের কারাগার থেকে অপরাধীদের পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে। অথচ গবেষণার তথ্য, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীসহ অভিবাসীরা মিলেও এতো অপরাধ করে না, যে হারে অপরাধী তালিকায় নাম আছে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বধারীদের। শত বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, মাংসের দাম চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়াসহ অন্তত এমন ২০টি মিথ্যা দাবি করেছেন ট্রাম্প, ফ্যাক্ট চেক করে দেখিয়েছে সিএনএন।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। ইলোন মাস্ক টুইটার কিনে নেয়ার পর ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টটি পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া হয়।