দুই সপ্তাহের মধ্যে দু'বার বন্যার কবলে ভারতের আসাম রাজ্য। দুইদিনের ভারি বৃষ্টিতে প্রাদেশিক রাজধানী গুয়াহাটিসহ ব্রহ্মপুত্রের কমপক্ষে চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে। এছাড়া ধানসিঁড়ি, কুশিয়ারা, ধলেশ্বরী, বরাকসহ কমপক্ষে ১২টি নদী বিপৎসীমায় প্রবাহিত। এতে তীব্র বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে শহর, গ্রাম- সবখানে। ক্ষতিগ্রস্ত ৭৪টি সড়ক, ছয়টি সেতু, ১৪টি বাঁধ। আরও পাঁচটি বাঁধ অতিক্রম করেছে বন্যার পানি।
স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘বন্যায় ভীষণ বিপদ বাড়ে মানুষের। অনেক বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। আমরা কী করতে পারি? এখানে বেঁচে থাকাই খুব কঠিন।’
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, বন্যায় পানিবন্দি ২৮ জেলার সাড়ে ১১ লাখ মানুষ। সবচেয়ে দুর্ভোগে লক্ষ্মীপুর, গোলাঘাট, ধিমাজি, তিনসুকিয়া ও বিশ্বনাথের বাসিন্দারা। মঙ্গলবারই বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকা থেকে প্রায় তিন হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্ধারকারী দল ছাড়াও উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী, রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী। প্রায় ৫শ' অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে তিন লাখ মানুষ।
আরেকজন স্থানীয় বলেন, ‘একদিন আগেও এতো পানি ছিল না। এখন সব ভেসে গেছে। আমাদের বাড়ি তলিয়ে গেছে। কাছেই একটা আশ্রয়কেন্দ্রে আছি এখন। খাবারের ব্যবস্থা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সব দোকান বন্ধ।’
মৌসুমের শুরুতেই দ্বিতীয় দফা বন্যায় ২২শ'র বেশি গ্রাম তলিয়ে গেছে এক লাখ পাঁচ হাজার একর কৃষিজমি। পানিবন্দি মানুষের মাঝে প্রায় ১১ লাখ কেজি চাল, দুই লাখ কেজি ডাল, এছাড়া লবণ-সরিষার তেল ও গবাদি পশুর খাবার বিতরণ করেছে প্রশাসন।
আরেকজন বলেন, ‘আমার ঘরের ভেতরে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। আমার ধান আর অন্যান্য শস্য নষ্ট হয়ে গেছে। পাঁচজনের পরিবার চালাই আমি। এখন এখানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে হয়তো আমার বাড়ির কোনো চিহ্নই থাকবে না আর।’
বিধ্বংসী বন্যার হাত থেকে সুরক্ষিত নেই বন্যপ্রাণীরাও। আসামে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দু'টি ন্যাশনাল পার্ক ১১শ' বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাজিরাঙার পুরোটা এবং ৩৫০ বর্গকিলোমিটারের দিব্রু সাইখোয়ার ৮০ শতাংশ এরই মধ্যে ভেসে গেছে। কাজিরাঙার ২৩৩টি ফরেস্ট ক্যাম্পের ১৬৭টিই কমপক্ষে পাঁচ ফুট পানির নিচে। সাত থেকে আট ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আটটি ক্যাম্প ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘কাজিরাঙায় যতোগুলো চেকপোস্ট আছে, প্রায় ৯৫টি, সবগুলোই পানির নিচে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নিকটবর্তী পাহাড়গুলোর দিকে সরে যাচ্ছে প্রাণীরা। আগামী তিনদিনে যদি বৃষ্টি না থামে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোনে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
প্রতিবেশী রাজ্য মনিপুরও তীব্র বৃষ্টির কবলে। ইমফলসহ প্রধান নদীগুলোতে পানি বিপৎসীমার ওপরে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যার জেরে বুধবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্যজুড়ে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ সব স্কুল। ইথাই ব্যারেজের পাঁচটি এবং ইমফাল ব্যারেজের চারটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উচ্চ সতর্ক অবস্থানে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম আর অরুণাচল প্রদেশসহ ভারতের গোটা উত্তরপূর্বাঞ্চল। আগামী চার থেকে পাঁচদিনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কবলে পবে পুরো ভারত, আভাস আবহাওয়া বিভাগের।