কৃষকদের একজন বলেন, 'ভোর ৪টায় উঠে কাজ শুরু করেছি। ৯টা বেজে গেছে, এখনো খাইনি। কৃষকদের জীবন খুবই কষ্টের।'
আরেকজন বলেন, 'দুই মাস ধরে বৃষ্টি নেই। নদীতেও পানি নেই। এবারের মতো খরা কখনো দেখিনি।'
টানা ১২ মাস ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে বিশ্বজুড়ে। এশিয়া থেকে আমেরিকা, ইউরোপ থেকে আফ্রিকা বিপর্যস্ত তাপপ্রবাহ, খরা ও দাবানলে। দেশে দেশে বাড়ছে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বাদ যাচ্ছে না পশু-পাখিও।
গত বছরের শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হয় কপ-টোয়েন্টি এইট জলবায়ু সম্মেলন। যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্রথমবারের মতো সম্মত হয় বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ। সম্মেলনের পর পেরিয়ে গেছে ৭ মাস। এসময় বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতির বৈরি আচরণে মারা গেছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ। যার মধ্যে আছেন ১ হাজারের বেশি হজযাত্রী।
ব্রিটিশ এনজিও ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে আর্থিক ক্ষতি ছাড়িয়েছে ৪ হাজার ১শ' কোটি ডলার। শুধু বীমার আওতাভুক্ত আর্থিক ক্ষতিগুলো প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি খোদ ক্রিশ্চিয়ান এইডের।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো কৃষিপ্রধান দেশগুলোর ওপর। তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে কমবে ফসলি জমি, কমবে খাদ্য উৎপাদন ও দেশজ উৎপাদন। কর্মঘণ্টা নষ্ট হবার পাশাপাশি ২০৩০ সাল নাগাদ কর্মহীন হতে পারেন বিশ্বের ৮ কোটি মানুষ। আগামী ২৫ বছরে বৈশ্বিক আয় প্রতিবছর গড়ে কমতে পারে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।
যতদূর চোখ যায় শুধু ফসলি জমি। পাখির চোখে দেখলে মনে হবে মাইলের পর মাইলজুড়ে বিস্তৃত জমি ছেয়ে আছে ফসলে। তবে চীনা কৃষকদের কান্না ভেজা চোখ বলছে ভিন্ন কথা। তীব্র তাপদাহে ফেটে চৌচির শানডং রাজ্যের ৩২ লাখ হেক্টর ভূট্টার ক্ষেত। মাত্র কয়েক গ্যালন পানিতে কতটুকু ক্ষতি পোষানো সম্ভব তা নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা সহনশীল মাত্রায় নিয়ে আসতে হলে কমিয়ে আনতে হবে তেল, গ্যাস, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। অন্যথায় শিগগিরই পৃথিবী পরিণত হবে বসবাসের অযোগ্য গ্রহে।