টর্নেডোর আঘাতে সৃষ্ট বৈরি আবহাওয়ায় বেশ কয়েকদিন ধরেই দুর্ভোগ সামাল দিচ্ছে টেক্সাস ছাড়াও কেনটাকি ও ওকলাহোমাসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্য। প্রাণ গেছে অনেকের। মঙ্গলবারও ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এতে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে ৯ লাখ ৪০ হাজার বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জনজীবনে ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। যা মোকবিলায় কাজ করে যাচ্ছে রাজ্যগুলোর জরুরি সেবায় নিয়োজীত কর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যের জরুরি সেবা বিভাগের পরিচালক এরিক গিবসন বলেন, 'আমাদের রাজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই গভর্নরের কাছে আবেদন করেছি, যাতে রাজ্যজুড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।'
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর বলছে, মে মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ৫ হাজার ৫শ'টির বেশি বজ্রসহ বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে। সঙ্গে ছিল ঝড়ো হাওয়াও। যা ২০১১ সালের পর যে কোনো মে মাসের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি।
এদিকে এক মাস ধরে বন্যায় ধুঁকছে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য রিও গ্রান্দে দো সুলের বাসিন্দারা। প্রাণ গেছে ১৬৯ জনের। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। এমন বিপর্যয়ের মধ্যে রাস্তাঘাট-পানিতে তলিয়ে থাকায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় ক্লাসরুম থেকে বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীরা। এতে পড়া-লেখা ছাড়াও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে দুই হাজার সরকারি স্কুলের অন্তত ২ লাখ শিক্ষার্থী।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে যেতে পারছি না। সবশেষ গত ২৯ এপ্রিল স্কুলে গিয়েছিলাম। ৩০ এপ্রিল বৃষ্টি শুরু হতেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।'
এই সময়টিতে কোভিডের পর শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে আসা সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন রাজ্যটির বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাই শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের মনোবল বাড়াতে জুনের প্রথম থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষকদের একজন বলেন, 'আমাদের অবকাঠামো এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব পড়েছে। এতে মানসিকভাবেও অনেকের ওপর প্রভাব পড়েছে। এখন পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি এটি মোকাবেলা করতে পারব।'
এদিকে তীব্র বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র পাপুয়া নিউ গিনিও। ইতোমধ্যে দেশটির এনগা প্রদেশের মাইপ-মুলিতাকা এলাকায় পাহাড় ধসে ২ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রভাবিত হয়েছে অঞ্চলটির অন্তত ৭০ হাজার বাসিন্দা।
পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে বলেন, 'অনেক বৃষ্টি হওয়ায় আমাদের নদী এলাকায় বন্যা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকটি এলাকায় ভূমিধস হয়েছে। এই বিপর্যয় শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করেনি, আমাদের অনেক মানুষের প্রাণহানিও হয়েছে।'
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার তাণ্ডবে চলতি বছর ইতিমধ্যে প্রায় ১৩ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পাপুয়া নিউ গিনির সরকার। ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে ভূমিধসের ঝুঁকি আছে এসব অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।