গাজায় বন্দি শতাধিক জিম্মিকে মুক্ত করে ফেরানোর দাবিতে শনিবার উত্তাল হয়ে ছিল রাজধানী তেলআবিব। ফিলিস্তিনিদের ওপর সাত মাস ধরে চলতে থাকা আগ্রাসন বন্ধেরও দাবি জানান লাখ লাখ ইসরাইলি বিক্ষোভকারী। গাজার শাসকদল হামাসের দেয়া অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বানও জানান অনেকে।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, 'নতুন চুক্তিতে সমর্থন জানাতে এখানে এসেছি। প্রত্যেক বন্দিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা জীবিত আছেন, তাদের তো বটেই, যারা মৃত, তাদেরও। তাদের প্রত্যেককে ফেরত চাই আমরা। সেজন্য সরকার বদলের দরকার পড়লেও শেষ দেখে ছাড়বো।'
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলার পর আড়াইশ'র বেশি মানুষকে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে কয়েক দফায় অর্ধেকের বেশি বন্দি ছাড়া পেলেও এখনও নিখোঁজ ১২৮ জন, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত বলে ধারণা করা হয়। ইসরাইলের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, বন্দিদের মুক্তির জন্য কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধ বন্ধের শর্তে মানবে না নেতানিয়াহু প্রশাসন।
তবে বিক্ষোভকারীরা এই সরকারকে আর দেখতে চান না। তাদের একজন গণমাধ্যমকে বলেন, 'এই জাতি, এদেশের মানুষ তাদের চায় না। পার্লামেন্টের ১২০ সদস্যের একজনকেও চাই না। আমরা চাই দেশের নেতৃত্ব অন্য কারো হাতে যাক।
তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, গাজায় সম্ভাব্য অস্ত্রবিরতি কার্যকরের লক্ষ্যে শনিবার বেশ গতি পেয়েছে মিশরের রাজধানী কায়রোতে চলমান আলোচনা। ইসরাইল সরকার ও হামাস প্রতিনিধি ছাড়াও আলোচনায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
এদিকে, গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এখনও চলছে। গত ১৭ এপ্রিল থেকে ৪৫টি অঙ্গরাজ্যের ১৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়েছে আন্দোলন। শনিবারও ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর ধরপাকড় চালায় পুলিশ। এ পর্যন্ত ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আড়াই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীকে। বিক্ষোভের অধিকার থাকলেও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ নেই বলে দেশজুড়ে বিক্ষোভের তৃতীয় সপ্তাহে মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ৯৯ শতাংশ আন্দোলনই শান্তিপূর্ণ বলে উঠে এসেছে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিক্ষোভ কর্মসূচির রিয়েল-টাইম তথ্যের শীর্ষ সূত্র এসিএলইডি'র জরিপে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'আমরা কোনো স্বৈরাচারী জাতি নই যে বিরোধীদের নীরব বা নিশ্চিহ্ন করে দেবো। মার্কিন জনগণের কথা সরকার শোনে। প্রথমত, বাকস্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিজেদের দাবি তুলে ধরার অধিকার সবার আছে। দ্বিতীয়ত আছে আইনের শাসন। এ দু'টোই রক্ষা করতে হবে।'
গাজা উপত্যকাকে ইসরাইলি অবরোধ থেকে মুক্ত করার দাবি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের আরও অনেক দেশে। শনিবারও জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বিক্ষোভ করেন প্রায় ১৩শ' মানুষ। ফিলিস্তিনি গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলের জন্য সহায়তা বন্ধ করতে জার্মান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। চলতি সপ্তাহেই ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধে জার্মানিকে নির্দেশ দেয় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত আইসিজে।
অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরাইলের ২১২ দিনের যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩৪ হাজার ৬৫৪ জনে, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।