গেল ফেব্রুয়ারির শেষে তাইওয়ানে ২৬তম বারের মতো আয়োজিত হয় ফানুস উৎসব। নতুন চন্দ্র নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সুখ ও সমৃদ্ধির আশায়, ১৯৯৯ সাল থেকে নিউ তাইপেতে পালিত হয় এই উৎসব। আকাশে ভেসে বেড়ানো শত শত ফানুসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশটিতে জড়ো হন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক।
তবে মুদ্রার ওপিঠের মতো এই উৎসবের রয়েছে ভিন্ন দিক। আগুনের শিখা নিভে যাওয়ার পর ফানুসগুলো নিউ তাইপের পিংক্সি জেলার আশপাশের গ্রামগুলোর মাটিতে পড়ে আবর্জনা তৈরি করে। এবার এই জঞ্জাল পরিষ্কারে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় ছিলো স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা।
ছাত্র-ছাত্রীরা বলেন, আমরা রাতের আকাশে ভেসে থাকা ফানুসের সৌন্দর্য উপভোগ করি ঠিকই, তবে পরিবেশের সৌন্দর্যের কথা ভাবি না। এভাবে আবর্জনার মতো পড়ে থাকা ফানুস পরিষ্কার করতে আমাদের খুব একটা ভালো লাগে না। তবে পরিবেশের কথা ভেবে আমরা পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। এমন অভিজ্ঞতার জন্য আমরা শিক্ষকের কাছে কৃতজ্ঞ।
পরিচ্ছন্নতার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৩৩ বছর বয়সী শিক্ষক চু তাই শু। তিনি বলেন, শুধু উৎসব নয়, মোটামুটি সারাবছরই এখন আকাশে ফানুস দেখা যায়। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো সবাইকে ফানুস উড়ানোর পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে জানানো।
শিক্ষক চু তাই শু বলেন, আমরা যদি ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের পরিবেশগত সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন উদযাপন থেকে বিরত থাকবে।
পরিবেশবিদরা অনেকদিন থেকেই এই ফানুস উৎসবের সমালোচনা করে আসছেন। কারণ, পিংক্সি জেলায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। ফলে সারাবছরই আবহাওয়া বেশ স্যাঁতসেঁতে থাকে। এই নিভে যাওয়া ফানুসগুলো এই অঞ্চলের মাঠ এবং বনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে পরিবেশের উপর ফানুসের এই ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে ভিন্নরকম ফানুস তৈরি করেছে চিয়াও টং ইউনিভার্সিটির কয়েকজন অধ্যাপক। এগুলো ১৫০ মিটার উচ্চতায় ভাসবে এবং ভেসে থাকা অবস্থায় সম্পূর্ণ পুড়ে যাবে। এতে চারপাশের পরিবেশও পরিচ্ছন্ন থাকবে।
তবে এ ফানুসগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় স্থানীয় কিংবা বিদেশি পর্যটক কেউই কিনতে আগ্রহী হন না। তাই দোকানিরাও এগুলো বিক্রিতে আগ্রহী নন। তবে ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়ানো গেলে মানুষ পরিবেশবান্ধব ফানুসগুলো কিনতে আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদী তারা।