মহাকাশে জমতে থাকা স্যাটেলাইট বর্জ্য নিয়ে আলোচনা বেশ অনেকদিন ধরেই। অনবরত কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোয় মহাকাশে তৈরি হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বর্জ্যের টুকরো। পৃথিবী থেকে কয়েক শত মাইল দূরে ভেসে বেড়ানো এসব বর্জ্যের গতিবেগ বুলেটের চেয়েও বেশি। এতে পৃথিবীর ওজোন স্তর ও জলবায়ু হুমকিতে পড়তে পারে।
কোন একসময় রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে মানুষের কোলাহল ভুলে থাকা সম্ভব ছিলো। কিন্তু এখন সেটা আর হয় না। স্পুটনিক উৎক্ষেপণের ৭০ বছর পর এখন মহাকাশে এতোবেশি প্রযুক্তি পণ্যের আনাগোনা, মহাকাশ গবেষকদের আশঙ্কা, আলোর দূষণে অদূর ভবিষ্যতে আর টেলিস্কোপ দিয়ে গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব হবে না। এরই মধ্যে মহাকাশে অনবরত কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোয় তৈরি হয়েছে ৩০ হাজারের মতো বলের আকারের বর্জ্যের টুকরো। পৃথিবী থেকে কয়েক শত মাইল দূরে ভেসে বেড়ানো এসব বর্জ্যের গতিবেগ বুলেটের চেয়েও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক এটমোস্ফেরিক এডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) বলছে, তারা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্তর স্ট্রাটোস্ফেয়ার নিয়ে গবেষণার জন্য একটি আকাশযান পাঠিয়েছে। এতে দেখা গেছে, মুনাফার কারণে মহাকাশে যান পাঠানোর প্রবণতা এতো বেড়েছে যে, এতে পৃথিবীর রক্ষাকবচ ওজোন স্তর, এমনকি পৃথিবীর জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
নোয়া বলছে, স্ট্রাটোস্ফেয়ারে এতো বেশি ক্ষুদ্র বস্তু আছে, যা আগে কখনো দেখা যায় নি। বায়ুমন্ডল নিয়ে গবেষণা করে দেখা যায়, কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া রকেট আর স্যাটেলাইটের বিভিন্ন ধাতু সেখানে জমা হচ্ছে বা ধ্বংস হচ্ছে। নোয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ যেভাবে তথ্য-প্রযুক্তিতে নির্ভরশীল হচ্ছে, তাতে আসছে দশকগুলোতে স্ট্র্যাটোস্ফেয়ারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মানবসৃষ্ট বর্জ্য বাড়বে।
ওজোন স্তরে এই বর্জ্য কিভাবে প্রভাব ফেলবে? সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট না হলেও জলবায়ুতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যখনই কোন বাণিজ্যিক মহাকাশযান রকেটে করে রওয়ানা দিচ্ছে, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত জ্বালানি। স্পেস এক্সের রকেটই প্রতিবছর মহাকাশযান উৎক্ষেপণের সময় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছে। এদিকে স্যাটেলাইটের বয়স বেড়ে কক্ষপথের বাইরে চলে গিয়ে বর্জ্যের মেঘ তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর হাজার হাজার স্যাটেলাইট যাচ্ছে টনে টনে জ্বালানি নিয়ে। এগুলো ফিরে আসার সময় আচরণ করছে গ্রহাণুর মতো।
ট্র্যাকিং সাইট অরবিট নাও বলছে, বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে আছে ৮ হাজার ৩শ'র বেশি স্যাটেলাইট। আরও অনেক স্যাটেলাইট যাওয়ার পথে আছে।
৩শ'র বেশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর কক্ষপথে যাবে ৪ লাখ ৭৮ হাজার স্যাটেলাইট। মার্কিন সরকার বলছে, আগামী ৬ বছরে ৫৮ হাজার স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাবে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আরও ২০ হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি যেতে পারবে। বিভিন্ন গবেষণা আর চলচ্চিত্রে দেখা যায়, মহাকাশে অনেক বেশি ট্রাফিক তৈরি হলে সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়বে, কমবে নতুন স্যাটেলাইট পাঠানোর সম্ভাবনা। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে বর্জ্য ঘণ্টায় ২৩ হাজার মাইল গতিতে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম বর্জ্যের কণা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জানালা-দরজা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
গবেষণা বলছে, বর্তমানে মহাকাশে কক্ষপথে এখন পেন্সিলের মাথার মতো ছোট ১০ কোটি টুকরো বর্জ্য ভাসছে। যে কারণে মহাকাশে ব্যবসা পরিচালনা এখন কঠিন। জাপানি কোম্পানি অ্যাস্ট্রোস্কেল ২০২২ সালে শক্তিশালী চুম্বক সংবলিত স্যাটেলাইট পাঠিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। এরপর নিউজিল্যান্ড থেকে পাঠানো হয় রকেট ল্যাব কোম্পানির মহাকাশযান। উদ্দেশ্য ২০০৯ সাল থেকে কক্ষপথে থাকা বর্জ্য নিয়ে গবেষণা আর সেগুলোর ব্যবস্থা করা।
কিন্তু দূষণ যেভাবে পৃথিবীর ভূমি, সমুদ্র, বাতাস থেকে এখন মহাকাশে চলে গেছে, তাতে করে জাপানের বিজ্ঞানী আর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র পাঠানো বিশ্বের সর্বপ্রথম পরিবেশবান্ধব স্যাটেলাইট আশা জাগাচ্ছে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মনে। এই স্যাটেলাইটের বেশিরভাগ অংশই কাঠের তৈরি।