ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের পরিকল্পনা, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ জিইয়ে রাখা, এমনকি ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার বেলায় ওয়াশিংটনের স্বার্থ- প্রতিটি ক্ষেত্রেই জড়িয়ে আছে দুর্লভ খনিজ উপাদান।
বিশ্বে প্রক্রিয়াজাত দুর্লভ খনিজ ধাতু এবং খনিজ চুম্বকের ৯০ শতাংশের বেশি চীনে পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ শুরুর পর এ ধরনের উপকরণ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে সরবরাহ সীমিত করে বেইজিং। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এই দুর্লভ খনিজের বাজারে চীনা আধিপত্য কমানো ট্রাম্পের ব্যক্তিগত মিশনে পরিণত হয়।
চীনের মতো এত বড় না হলেও অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে বড় বিরল খনিজের ভাণ্ডার। কার্বোনাটাইট, অ্যালকালাইন আগ্নেয় শিলা, আয়নিক-ক্লের মতো খনিজ প্রক্রিয়াজাত করে এগুলোকে রপ্তানিমুখী শিল্পে রূপান্তর করার পথে আছে দেশটি। আর এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গেল চার পাঁচ মাস ধরে একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
অবশেষে ট্রাম্পের এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৮শ' কোটি ডলার মূল্যের খনিজ চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় পাইপলাইনে থাকা খনিজ উত্তোলন সংক্রান্ত যৌথ প্রকল্পে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ১শ কোটি ডলার খরচ করবে দুই দেশ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবমেরিনসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র কেনার কথা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
দুর্লভ খনিজের বাজারে যখন কোনো ভাবেই চীনকে কোণঠাসা করা যাচ্ছে না তখন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এমন চুক্তিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করলে অস্ট্রেলিয়ার সেনা সক্ষমতা ভিন্ন স্তরে উন্নীত করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার মানুষ মার্কিনিদের পছন্দ করে। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও আমাদের ভালোবাসেন। আমরা যত সামনের দিকে এগিয়ে যাবো, আজকের দিনটি আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে দেখা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এ চুক্তিতে স্বাক্ষরের আগে চার থেকে পাঁচ মাস আলোচনা হয়েছে। এসময়ে অ্যান্থনি আলবানিজের যুক্তরাষ্ট্র সফর ও এ চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দুর্লভ খনিজই নয়, আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়েই আগামী বছর চীন সফরের বার্তা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শিয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগামী বছর চীন সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি হবে বলে আশা করছেন ট্রাম্প।
পর্যায় সারণির ১৭টি ধাতব মৌলকে বলা হয় দুর্লভ খনিজ। যেখানে আছে, স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইড সিরিজের ১৫টি মৌল। আকরিক থেকে নিষ্কাশন করা কঠিন এবং বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেশি হওয়ায় এদের দুর্লভ খনিজ বলা হয়। সোলার প্যানেল থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং সামরিক সরঞ্জাম থেকে মাইক্রো চিপ- অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে অপরিহার্য এসব খনিজ।





