দিগন্তে ডানা মেলা বোয়িংয়ের স্বচ্ছ আকাশে আজ কালো মেঘ। একচেটিয়া আধিপত্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানটির সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। একের পর এক বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বেসামাল অবস্থায় আকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। সেই সঙ্গে নানা মহলের সমালোচনা তো আছেই।
এর মধ্যেই সম্প্রতি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বোয়িং। যাতে বিদায়ী বছরে ১১.৮ বিলিয়ন বা প্রায় ১২শ' কোটি ডলার লোকসানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠানটির জন্য ২০২০ সালের পর সবচেয়ে বড় আর্থিক ক্ষতি। এর কারণ হিসেবে ডেলিভারি রেসে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের কাছে জায়গা হারানো ও কারখানার শ্রমিকদের ধর্মঘটকে দায়ী করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বিক্রি ৭৭৪টি থেকে ৫২৮টিতে নেমে আসে। দ্য গার্ডিয়ানের সূত্র বলছে, ২০২৪ সালে বোয়িং মাত্র ৩৪০টি উড়োজাহাজ বিক্রি করেছে। যেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাস বিক্রি করে ৭৬৬টি। যা প্রায় দ্বিগুণ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ক্ষতি হয়েছে ৩৮৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনমাসে প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্ব ৩১ শতাংশ কমে যাওয়ায় তাদের আয় হয় ১ হাজার ৫২৪ কোটি ডলার। অথচ ফিনান্সিয়াল মার্কেটস ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেটার প্রত্যাশা অনুযায়ী যার পরিমাণ ১ হাজার ৬২১ কোটি ডলার হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে গেল বছরের শেষ প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি প্রায় ৬ ডলারের কাছাকাছি ক্ষতি গুণতে হয়েছে মার্কিন এই আকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে। যেখানে তাদের প্রত্যাশা ছিল ৩ ডলারের।
আবার ২০২৪ সালে বোয়িংয়ের মোট অর্থলগ্নির পরিমাণ ছিল ১৪শ' কোটি ডলারের বেশি। যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার বেশি। তবে একাধিক ভুল পদক্ষেপের কথা স্বীকার করেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও কেলি অর্টবার্গ। গত আগস্টে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর জেটগুলোর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
গত ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বোয়িংয়ের একটি বিমান। এতে নিহত হন অন্তত ১৭৯ জন। এর আগে ২০১৯ সালে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজের দুটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা ও ইথিওপিয়ায় আলাদা দুটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ২৫০ আরোহী।