দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে যেসব দেশের স্বার্থ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে তাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের এই সংবেদনশীল অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল ওয়াশিংটন। তবে শুরু থেকেই, বেইজিংয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছে চীন।
এমন বাস্তবতায় চীনের নতুন মাথাব্যথার কারণ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগর ইস্যুতে টোকিও ও ওয়াশিংটনের যৌথ বিবৃতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে রাশিয়ার সাথে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে- সেটিও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যকে টলানোর জন্য যথেষ্ট।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, 'জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিবৃতি অসম্মানজনক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা। তারা চীনের পররাষ্ট্রনীতি ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিচ্ছে। চীন সাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বেইজিংয়ের নীতি ও সামরিক তৎপরতা নিয়ে তারা অবিবেচকের মতো মন্তব্য করেছে। এতে করে ঐ অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠায় চীনের অংশীদারিত্ব স্বীকার করতে হবে।'
চীন ও উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিপরীতে জোট গঠনের মাধ্যমে হুমকি মোকাবিলায় সোমবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা'র সাথে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। পাশাপাশি কোয়াড জোটের সক্ষমতা বাড়াতে সদস্য রাষ্ট্র ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথেও আলাদাভাবে বৈঠক করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সমুদ্রপথে স্বাধীন ও সর্বজন স্বীকৃত নীতি বাস্তবায়নে জোর দেন কোয়াড জোটভুক্ত নেতারা।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, 'বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে অশান্তি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এসব কারণে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সহযোগিতার যে সম্পর্ক আছে তা আরও জোরদার করতে হবে। আশা করি, আমরা জোটের নীতি থেকে সরে আসব না।'
এদিকে, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিরক্ষা জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে তা চীনের জন্য হুমকি হতে পারে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জোটের সদর দপ্তর জাপানে নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত এসেছে তা বাস্তবায়িত হলে এই দুই দেশ যে কোনো সংকটে একযোগে ভূমিকা রাখতে পারবে। যা অন্যান্য পরাশক্তিগুলোর জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না।
জাপান ফোরাম ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিসের জ্যেষ্ঠ গবেষক গ্রান্ট নিউসম বলেন, 'জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বিপাক্ষিক জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। খুব অল্প সময়ের সিদ্ধান্তে তারা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে অভিযান চালাতে পারবে। তবে এতে করে নতুন কিছু প্রশ্ন উঠছে। এই সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে বা কী ধরনের সমরাস্ত্র মজুদ রাখা হবে?'
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের অতীত ইতিহাস খুব একটা সুখকর না হলেও, প্রতিরক্ষা জোট গঠনের এই সিদ্ধান্ত চীনের জন্য অশনি সংকেত। জোটের নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও পরমাণু অস্ত্র ইস্যুতে জাপানের যে অস্বস্তি আছে তা দূর হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে, জাপানকে সুরক্ষা দিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তাদের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে- মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে টোকিও।