প্যাভিলিয়নের সামনে হাত পা নেড়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন দু'জন বয়স্ক লোক। তাদের সাজপোশাক অদ্ভুত, অঙ্গভঙ্গিও বেশ বিচিত্র। তাদেরকে ঘিরে রেখেছে একদল দর্শনার্থী। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার ভিডিও করছেন। তবে, প্রথম যে দু'জন বয়স্ক লোকের কথা বলা হলো, তারা মানুষ নন, তারা রোবট। ওয়ার্ল্ড রোবট কনফারেন্স বা ডব্লিউআরসি'র এবারের আসরে এভাবেই সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চীন।
রোবটিক্স দুনিয়ার সবশেষ সংযোজন নিয়ে এবারের কনফারেন্সে অংশ নিয়েছে চীনের শীর্ষস্থানীয় রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থা। মানুষ, কুকুর, গৃহপরিচারক এমনকি শেফের আদলে তৈরি রোবটের প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে, সবার নজর কেড়েছে 'হিউম্যানয়েড রোবট', যার অভিব্যক্তি ও চলাফেরা হুবহু মানুষের মতো।
একজন দর্শক বলেন, 'প্রদর্শনী দেখে মনে হচ্ছে রোবটিক্সের ওপর আমাদের দখল বেশ ভালোই। যদিও, কাজের ক্ষেত্রে তরুণ প্রকৌশলীদের অনেক চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়।'
হিউম্যানয়েড রোবট বানানোর পেছনে রয়েছে চীনের ইউনিট্রি ও ইউবিটেক রোবোটিক্সের মতো প্রতিষ্ঠান। ইউবিটেকের প্রোডাক্ট ম্যানেজার বলছেন, প্রযুক্তিবাজারে রোবোটিক্সের পরিধি আগামী কয়েক বছরে ১০ গুণেরও বেশি বাড়বে। মানুষের বাসা-বাড়িতে এ ধরনের রোবট দেখা যাবে হরহামেশাই।
ম্যানেজার বলেন, 'মানুষের ঘরে ঘরে এই হিউম্যানয়েড রোবট পৌঁছে দেয়াটাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। আগামী দু'বছর আমরা রোবটটি বাজাতজাত করার বিষয়ে কাজ করবো। প্রথমে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণের কাজ ও ছোট ছোট অফিসের লজিস্টিক্যাল সাপোর্টের জন্য রোবটিকে ব্যবহার করতে উৎসাহ দিচ্ছি। পরবর্তীতে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও হাসপাতালেও বাণিজ্যিকভাবে হিউম্যানয়েড রোবটের ব্যবহার শুরু হবে।'
হিউম্যানয়েড রোবট ছাড়াও এই কনফারেন্সের বাড়তি আকর্ষণ ছিল রোবট কুকুর। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিপ রোবটিক্সের মিডিয়া ম্যানেজার বলেন, যে কোনো উদ্ধার অভিযান ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার সময় এই রোবট খুবই কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে, প্রতিকূল পরিবেশ, বিষাক্ত গ্যাস ও প্রচণ্ড তাপ সহ্যের ক্ষমতা থাকায় রোবট কুকুর জরুরিসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে।
গেল এপ্রিলে আয়োজিত প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট কনফারেন্সে ঘোষণা করা হয়, ২০২৪ সাল নাগাদ বিশ্ববাজারে চীনের রোবটিক্স খাতের পরিধি হবে প্রায় ৩৯ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৯ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ প্রযুক্তিবাজারে ৩৩ শতাংশই থাকবে চীনের হিউম্যানয়েড রোবটের দখলে। ২০৩৫ সাল নাগাদ হিউম্যানয়েড রোবটের বাজারের পরিধি ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাপিয়ে যাবে বলে মনে করেছেন আয়োজকরা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর এই হিউম্যানয়েড রোবটটি ফিফথ জেনারেশন রোবটিক্সের একটি সংস্করণ। ২০১৬ সালে এর কোনো হাত বা পা ছিল না। ২০২১ সালে মাথা ও হাত-ওয়ালা 'ওয়াকার এক্স' নামে ফোর্থ জেনারেশনের একটি রোবট বাজারে আনে চীন। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামীতে সিক্সথ জেনারেশনের রোবট বাজারে আনার প্রস্তুতি চলছে দেশটিতে। এই রোবট যে কোন বস্তু দেখেই চিনতে পারবে, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার মতো কাজও করতে পারবে অনায়াসে।
রোবটিক্সের দুনিয়ায় চীন যেভাবে সবাইকে টেক্কা দিচ্ছে তাতে করে পশ্চিমারা অচিরেই প্রযুক্তি বাজারের নিয়ন্ত্রণ হারাবে বলে আশা করছেন দেশটির রোবট নির্মাতারা।