হ্যাকিং প্রতিরোধে কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক তৈরিতে কাজ করছেন গবেষকরা

.
প্রযুক্তি সংবাদ
তথ্য-প্রযুক্তি
0

সাইবার আক্রমণে বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ক্ষতি হচ্ছে তিন লাখ ডলারের বেশি। এ অবস্থায় হ্যাকিং প্রতিরোধে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে প্রযুক্তিবিদরা। এর জন্য প্রচলিত ক্লাসিক্যাল নেটওয়ার্কের জায়গায় অত্যাধুনিক কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক চালু করতে দিনরাত কাজ করছেন গবেষকরা। আর এই কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার ভাবনা থেকে গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি যুক্তরাজ্যের।

আর্থিক, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি খাতসহ বিশ্বের নামিদামি সব প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে আক্রমণ চালায় হ্যাকাররা। অর্থ থেকে শুরু করে হাতিয়ে নেয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত। এভাবেই বিশ্বব্যাপী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে সাইবার অপরাধ।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে হ্যাকারদের আক্রমণে বিশ্বে ক্ষতির পরিমাণ ছিল তিন লাখ কোটি ডলার। তবে তা বেড়ে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সাড়ে ৯ লাখ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া ২০২৫ সালে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে সাড়ে ১০ লাখ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সাইবার সিকিউরিটি ভেঞ্চারস।

সংস্থাটি বলছে, সাইবার অপরাধে বছরে ক্ষতি বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ। যদি এই খাতকে একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে সাইবার ক্রাইম। এ অবস্থায় প্রচলিত ক্লাসিক্যাল ইন্টারনেটের চেয়ে কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক আরও বেশি নিরাপদ বলে মনে করছেন গবেষকরা।

যুক্তরাজ্যের গবেষক প্রফেসর চার্লোট ডিন বলেন, 'একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু এতে জাদুর কিছু নেই। এটি আমাদের ব্যবহার উপযোগী। দ্রুত কাজ করা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সেই সঙ্গে অনেক বেশি নিরাপদ।'

এক্ষেত্রে হ্যাকিং বা সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রত্যাশায় এগুচ্ছে স্কটল্যান্ডের একদল গবেষক। তাদের এই অগ্রযাত্রায় জাতীয় কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক কোর তৈরিতে ১৬ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে ডেটা নিরাপত্তায় বিপ্লব ঘটাতে চায় যুক্তরাজ্য।

গবেষক প্রফেসর জেরাল্ড বুলার বলেন, 'কোয়ান্টাম ইন্টারনেটকে আমি নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ণনা করেছি। যা অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোকে নিরাপদে সংযুক্ত করতে পারে। এখানে অবশ্যই এআই একটি ভূমিকা পালন করতে পারে।'

যুক্তরাজ্যের কোয়ান্টাম হাবগুলো নিজেদের পাশাপাশি পুরো বিশ্বের জন্য উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে সাইবার অপরাধ জনিত ক্ষতি।

প্রফেসর চার্লোট ডিন বলেন, 'আপনি যদি আমাকে কল্পনা করতে বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাড়িতে কি কোয়ান্টাম কম্পিউটার থাকবে? বলবো, না। তবে কখনোই হবে না এমনটা বলতে চাই না। কারণ আমরা এই বিষয়গুলো আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই মুহূর্তের জন্য খুব জটিল। আমরা এমন এক পর্যায়ে আছি যেখানে আমরা একটি অত্যন্ত সফল কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির বিভিন্ন উপায় অন্বেষণ করছি।'

সাইবার অপরাধে বছরে অন্তত ২ হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড ক্ষতি হয় যুক্তরাজ্যের। এ অবস্থায় সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুরো বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার পথে এগুচ্ছে তারা। এ লক্ষ্যে ২০৩৫ সালের মধ্যে কোয়ান্টাম-সক্ষম অর্থনীতিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়তে চায় যুক্তরাজ্য। বাড়াতে চায় এই খাত সংশ্লিষ্ট শিল্প ও কর্মসংস্থান।

tech