মাত্র ১৫ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে এসব ফোন পাওয়া যাচ্ছে, ১৬ ডিসেম্বরের পর ফোনগুলোর মূল্য দাঁড়াবে ২৩ থেকে ৭৮ হাজার টাকা। কিন্তু কেন দামে এমন হঠাৎ পরিবর্তন?
১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার বা এনইআইআর কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। এতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে নতুন, ব্যবহৃত বা ভিনদেশ থেকে আনা ফোনগুলো। সেখানে মুঠোফোন ও সিমের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে একই ব্যক্তির এনআইডিতে।
পুরো বিষয়টিতে ৯টি মুঠোফোন সংযোজন কোম্পানি বেশি সুবিধা পেলেও সংকট হবে আমদানিতে। মুঠোফোন আমদানিতে বসবে প্রায় ৫৭ থেকে ৬১ শতাংশ শুল্ক। আকাশচুম্বী দামে ফোন বিক্রি করায় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে স্থানীয় মুঠোফোন বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য।
এমন সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মাঝে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানালেও বিক্রেতারা বলছেন, তাদের হাতে এখনো অনেক পরিমাণে মুঠোফোন আছে; যা ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বিক্রি না হলে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। মুঠোফোন আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ছোট করে দিতে পারে তাদের ব্যবসার পরিধি। তাই শুল্ক কমানোর দাবি তাদের।
এক বিক্রেতা জানান, এনইআইআর সিস্টেম চালু হোক সেটা আমরা চাই। কিন্তু সরকারের যে ৫৭ শতাংশ শুল্ক সেটা ব্যবসায়ী, বিক্রেতা বা গ্রাহক কারো জন্যই কল্যাণকর নয়।
আরেক বিক্রেতা জানান, সরকার যদি ১৫ শতাংশ করেও শুল্ক নেয় তাহলেও টাকা রাখার জায়গা পাবে না।
ক্রেতারা বলছেন, অবশ্যই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা জরুরি। কিন্তু অফিশিয়াল ফোন কিনতে যে অতিরিক্ত ব্যয়- তা যেন কমিয়ে নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা যায় সেই প্রত্যাশা তাদের।
এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি মনে করি এটা একদিক থেকে ভালো। সরকারের রাজস্ব আয় ভালোভাবে হবে।’ আরেক ক্রেতা বলেন, ট্যাক্স অ্যাড হবে, লিগ্যালি ফোন ঢুকবে। কিন্তু আমার মতে ট্যাক্সটা সেভাবে নির্ধারণ করা উচিত।’
এনইআইআর পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তের পর আমদানি ফোনে শুল্ক কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও দোকান বন্ধের কর্মসূচী পালন করেছে ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছে সরকার। মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সভাপতি জানান, শুল্ক কমানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তিত তারা।
মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সভাপতি মো. আসলাম বলেন, ‘আমি ট্যাক্স দিয়ে পণ্য আনতে চাই। এখন ধরেন আমি যদি ৫৭, ৫৮ বা ৫৯ শতাংশ দেই ২ লাখ টাকার আইফোন তখন তিন লাখ টাকার ওপরে চলে যাবে। তখন টাকাটা দিবে কে ভোক্তা দিবে না? তো এ দেশের মানুষ কত শতাংশ ট্যাক্স দিলে ফোন কিনে ব্যবহার করতে পারবে সেটা মাথায় রেখে আমাদের নিয়ে বসেন। বসে একটা ট্যাক্স নির্ধারণ করেন।
এনইআইআর বাস্তবায়নে সরকারের তরফ থেকেও বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। এর মধ্যে প্রবাসীরা ৬০ দিনের বেশি দেশে অবস্থান করলে তাদের ফোন নিবন্ধন করতে হবে। বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড থাকলে ৩টি ফোন আনা যাবে বিনা শুল্কে; আর কার্ড না থাকলে আনা যাবে দুইটি। এছাড়া বৈধ আইএমইআই ফোনগুলোর স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন হবে বলে জানায় সরকার।
আমদানিতে ট্যাক্স কমানোর ব্যাপারে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, ‘যেগুলো স্টকে আছে সেগুলোকে কীভাবে বৈধতা দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে কথা বলছি। এ বিষয়টা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। এনবিআর, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আমাদের সময় দেবে। আমরা সিগনিফিক্যান্টলি কমানোর কথা বলেছি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো অনিরাপত্তা দূরীকরণে এনইআইআর সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন, তবে তা যেন গ্রাহক ও ব্যবসায়ীবান্ধব হয়- সে নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে।
টেলিকম খাত বিশেষজ্ঞ নুরুল কবির বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, নিরাপত্তার স্বার্থে, ব্যব্হারকারীর নিরাপত্তা ও আইডেন্টিটির স্বার্থে এটা নিয়ে সবার একত্রিতভাবে কাজ করা উচিত। বিটিআরসি থেকে শুরু করে মোবাইল অপারেটরদের দায়িত্ব রয়েছে আস্থার জায়গা তৈরির দিক থেকে। আস্থার জায়গা যখন তৈরি হবে তখন এটা বিভ্রান্ত হওয়ার আর কিছু নাই।’





