তথ্য-প্রযুক্তি
0

মহাকাশে দুই নভোচারী আটকা; তীব্র সমালোচনার মুখে বোয়িং ও নাসা

মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের মহাকাশযান স্টারলাইনারে করে মহাকাশে গিয়ে দুই নভোচারীর আটকা পড়ার ঘটনায় চরম তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে বোয়িং ও নাসা। কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের পরও কেনো স্টারলাইনারের এই অবস্থা, তা নিয়েও চলছে বিতর্ক। এদিকে, এ ঘটনায় মহাকাশযাত্রায় চাহিদার তুঙ্গে উঠেছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের মহাকাশযান 'ড্রাগন'।

আট দিনের সফরে গিয়ে আটকে গেলেন ৮ মাসের জন্য। তাও আবার পৃথিবীতে নয়, মহাকাশে। আট মাসেও পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন কি না এখন তা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। গেলো ৫ জুন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অভিযানে যাওয়া দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়াম আর ব্যারি উইলমোর আটকা পড়েন মহাকাশে।

জুনে মার্কিন এভিয়েশন প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান এই দুই নভোচারী। যাত্রার সময় এই মহাকাশযানে হিলিয়াম লিকেজ হয়, প্রোপালশন সিস্টেমে ফুয়েল ঢুকে যায়, থ্রাস্টারস কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলশ্রুতিতে বোয়িংয়ের মহাকাশযান প্রথম যাত্রাতেই যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে।

প্রকৌশলীরা কয়েক মাসের চেষ্টার পরও কোনোভাবেই স্টারলাইনার মহাকাশযানে করে নভোচারীদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। এরপরও নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। লক্ষ্য ছিল একটাই, যে করেই হোক এই স্টারলাইনার দিয়েই দুই নভোচারীকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা।

তবে, সমস্যার কোনো কূলকিনার করতে না পেরে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সিদ্ধান্ত নেয়, নভোচারীদের নিরাপত্তায় স্টারলাইনার নয়, স্পেস এক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে সুনিতা আর ব্যারিকে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হবে স্পেস এক্সের এই মহাকাশযান। এটির ধারণ ক্ষমতা চার জন হলেও দুটো সিট খালি যাবে, যে সিটগুলোতে করে ফিরে আসবেন আটকে পড়া নভোচারীরা। স্টারলাইনার পৃথিবীতে ফেরত আসবে ফাঁকা। আপাতত সেপ্টেম্বরে স্পেস এক্সের ড্রাগন মহাকাশযান পরীক্ষামূলকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। ২০২০ সাল থেকে নভোচারীদের আইএসএস পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে এই স্পেস এক্স।

এদিকে, ঝুঁকি জেনেও বোয়িংয়ের স্টারলাইনারে করে কেনো নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানো হলো, সেই প্রশ্নবাণে এখন জর্জরিত নাসা আর বোয়িং। যদিও যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না কোনো পক্ষই। কারণ এর আগে পরীক্ষামূলক যাত্রায় স্টারলাইনারের ২৮টি থ্রাস্টার্সের মধ্যে ৫টি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। এই সমস্যার সমাধান এখনও খুঁজছে বোয়িং আর নাসা। জুন থেকে বোয়িংয়ের আরেকটি স্টারলাইনার ক্যাপসুল 'ক্যালিপসো' রয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে।

যদিও নিজেদের মিশনের ব্যর্থতা কিংবা স্টারলাইনার নিয়ে নেতিবাচক কোনো কথা বলতে নারাজ নাসা। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি বলছে, দুই নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকা পড়েনি, তারা গবেষণা করছে। আগামী বছর স্পেস এক্সের মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরবেন তারা।

এই যখন অবস্থা তখন মহাকাশ গবেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় বোয়িংয়ের মহাকাশযান তৈরির পথে এবার বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে স্টারলাইনার সংকট। প্রতিদ্বন্দ্বী বিলিওনিয়ার ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেও আগামী দিন লড়াই করতে হবে বলেও মত তাদের।

এর আগে ২০১৯ সালে নভোচারী ছাড়া প্রথম স্টারলাইনার মিশনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ডক করার আগেই কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তদন্তে উঠে আসে সফটওয়্যার ত্রুটি। এরপর ২০২২ সালে সফটওয়্যার আর থ্রাস্টার্সে ত্রুটি ধরা পড়ে। বির্তকের পরও সেসময় মিশনটি সফল হওয়ায় স্টারলাইনারকে নাসার পক্ষ থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও স্টারলাইনার নিয়ে এখনও আশাবাদী নাসা।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর