কর্পোরেট
স্বাস্থ্য
0

‘বয়স হলে ব্যথা হবেই এটা অবৈজ্ঞানিক ভ্রান্ত ধারণা’

পর্ব: ৫

ঘাড় ব্যথায় ভুগছেন, চারপাশে এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। চিকিৎসকরা বলে থাকেন, স্বল্পমেয়াদি ব্যথা এক মাসের কম সময় থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ব্যথা এর চেয়ে দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়ে থাকে। ঠিক কী কী কারণে এ ব্যথা হয়, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিচ্ছে শ্যামলীর ঢাকা পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (ডিপিআরসি)। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডিপিআরসির বাত-ব্যাথা, প্যারালাইসিস ও রিহ্যাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের টিস্যু বা মাসেলের প্রতিটা সেলের শক্তি-সামর্থ্য কমে আসে। যখন বয়স বাড়তে থাকে, ৪০, ৫০, ৬০, ৭০, ৮০ বয়সে গেলে আস্তে আস্তে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাংসপেশির ব্যথা।

যেমন কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, অনেকের মাসেল ব্যথার সাথে মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া, হাঁটু ব্যথা, হাঁটুর শক্তি কমে আসা, হাঁটা চলাফেরা কষ্ট হওয়া, বুকের ব্যথা, পেটের ব্যথা, বা মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা এবং ঘাড় ব্যথার সাথে দেখা যায় যে দৈনন্দিন যে কাজকর্ম আমরা বলি, অ্যাক্টিভিটিজ অফ ডেইলি লিভিং ( এডিএল) মানে জামাকাপড় পরতে বয়স্কদের সমস্যা হয়, বিছানায় রাতে শুলে মাংসপেশি চাবানো কামড়ানো বা অনিদ্রা ঘুম না আসা।

তারপরে হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন হৃদরোগজনিত সমস্যা এবং ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বয়সজনিত মানুষের আর্থাইটিস ডেভেলপ করে স্পনডাইলোসিস হয়। এতে দেখা যায় যে মানুষ আস্তে আস্তে শক্তি-সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে।

এই রোগীদের করণীয় আমি বলব যে, আমাদের জনসচেতনতা দরকার। আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে, যে বয়স হলে তো ব্যথা হবেই। বয়স হলে কোমর ব্যথা হবে, বয়স হলে বিছানায় পড়ে থাকবে বা বয়স হলে স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে থাকবে, এটার কোনো চিকিৎসা নেই- এটা একটা অবৈজ্ঞানিক ভ্রান্ত ধারণা, অপধারণা।

আমরা যে যে বসে থাকি না কেন আমাদের যে রিহ্যাবিলিটেশন টিমওয়ার্ক, আমরা যে রিহ্যাব কথা বলি, আমি যেমন রিহ্যাবি ফিজিও বিশেষজ্ঞ। আমরা চাই একটা মানুষ আমৃত্যু মানে মরণের আগ পর্যন্ত সে যেন তার নিজের কাজ নিজে করতে পারে। সে যেন নিজের নামাজ নিজে, কারও হেল্প ছাড়া নামাজ রোযা তার ধর্মীয় কাজ বা অন্য যে যে ধর্মে আছেন না কেন, তার কাজটা সে করতে পারে। চলাফেরা করতে পারে, অন্য জনের উপর ডিপেন্ডেন্সি না হয়।

এইজন্য আমাদেরকে বিভিন্ন অ্যাডভান্স রিহ্যাবি ফিজিও চিকিৎসা নিতে হবে। এ জাতীয় বয়স্ক রোগী যারা বাসায় আছেন তাদেরকে এই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিলে অনেকাংশে এই সমস্যাগুলো চলে যাবে।

ব্যথায় কুসুম গরম সেঁক বয়স্ক মানুষের জন্য খুবই উপকারী। শ্বাস-প্রশ্বাসের যে ব্যায়ামগুলো আমরা দিয়ে থাকি এ ব্যায়ামগুলো খুবই উপকারী এবং সকালের রোদ, সকালের বা বিকেলে রোদ হোক, স্পেশালি সকালের রোদটা আমরা বেশি প্রেফার করে থাকি। এই রোদে হাঁটা বয়স্ক মানুষের জন্য খুব ইম্পর্ট্যান্ট এবং বয়স্ক মানুষের যে কমন রোগ গুলো আছে। যেমন হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য পুরুষদের প্রোস্টেটের ডিজিজ, মহিলাদের বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যাগুলো কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে হবে।

আমাদের বডি মিনিটে বানানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার আমাদের বয়স্ক মানুষদের দিতে হবে। অনেকসময় যাদের বয়স হলে আঘাত পান, আপনারা পড়ে যান, সেই ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রয়োজনে এক্সরে করে দেখতে হবে যে অনেকসময় ভেঙ্গে যায়। রোগী জানে না।

আসুন আমরা আমাদের বয়স্ক মানুষদের পাশে দাঁড়াই এবং তাদের এই জাতীয় চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তাদেরকে আমাদের মূল ধারায়, আমাদের ফ্যামিলি বাইন্ডিংসটা আমরা বাড়াই এবং মূলধারায় তাদেরকে আমরা আমাদের বিভিন্ন কাজে ধর্মীয়, সামাজিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ যেন তারা করতে পারে সেই দিকে আমরা ফিরিয়ে আনি।

এসএস