ঝগড়া: সম্পর্ক মজবুতও করতে পারে; ভাঙনের কারণও হতে পারে

ঝগড়া
ঝগড়া | ছবি: সংগৃহীত
2

ঝগড়া বলতে বোঝায় কলহ, বিবাদ বা তর্ক-বিতর্ক; যা সাধারণত মতপার্থক্য বা ভুল বোঝাবুঝি থেকে সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ছোটখাটো ঝগড়া সম্পর্কের ভেতর জমে থাকা অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দেয় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়িয়ে সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারে। তবে ঝগড়া যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাই ঝগড়ার সময় শান্ত থাকা, ধৈর্য বজায় রাখা এবং সমস্যার মূল কারণ খুঁজে সমাধানের দিকে এগোনোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

অনেকেই আছেন যারা ঝগড়ার সময় শান্ত থাকতে পারেন না। সেজন্য দেখা যায় ঝগড়া থেকে অনেকসময় বড় বড় বিবাদের সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে মারামারি, হানাহানিতেও রূপ নিতে পারে। সেজন্য ঝগড়া যখন শুরু হয় সেজন্য ছোট থাকতেই তা মিমাংসা করে নেয়া উচিত।

ঝগড়ার কারণ ও প্রভাব

কারণ: নিজেদের মধ্যে মতের অমিল, ভুল বোঝাবুঝি, রাগ, অভিমান, বা কোনো কিছু নিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে ঝগড়ার শুরু হয়ে থাকে।

ইতিবাচক প্রভাব: রাগ পুষে না রেখে মন খুলে ঝগড়া করলে সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হতে পারে এবং ভালোবাসা বাড়ে।

নেতিবাচক প্রভাব: মাত্রাতিরিক্ত ঝগড়া সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি করে এবং বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন:

ঝগড়ায় বাড়ে ভালোবাসা!

ঝগড়া কি শুধু সম্পর্ক নষ্ট করে? মোটেও না, বরং ঝগড়া করলে সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও মজবুত হয়। আবার ভালোবাসাও বাড়ে। রাগ অভিমান পুষে না রেখে মন খুলে ঝগড়া করে সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে। এতে সবারই নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার আছে।

বিশ্বাস বাড়ে, সন্দেহ দূর হয়

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দাম্পত্যে ঝগড়া হতে পারে। এর ফলে বিশ্বাসের ভিত আরও মজবুত হয়। কারণ ঝগড়ার মাধ্যমে মনের লুকানো ক্ষোভ ও অভিমান প্রকাশ পায়। এর ফলে দুজনের বিশ্বাসের বন্ধনটা অনেক দৃঢ় হয়। অনেকেই সঙ্গীর প্রতি সন্দেহপ্রবণ হয়ে ঝগড়া বা অশান্তি করে থাকে। এক্ষেত্রে সঙ্গীও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে। সবমিলিয়ে দুজনের মধ্যকার অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর হয়ে যায় মুহূর্তেই।

অভিমান দূর হয়

ঝগড়া করলে মনে পুষে রাখা অভিমান দূর হয়। সঙ্গীর যেকোনো কাজ খারাপ লাগতেই পারে। তবে সেই খারাপ লাগা নিজের মধ্যে পুষে না রেখে মুখের উপর বলে দিতে হয়। এতে সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে। হয়তো মনোমালিন্য হতে পারে। মুষলধারে বৃষ্টি শেষে যেমন আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়, তেমনই দীর্ঘ ঝগড়ার শেষে মান-অভিমান দুজনকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। এতে সম্পর্ক আরও মজবুত ও দৃঢ় হয়।

ধৈর্যশক্তি বাড়ায়

আরও পড়ুন:

দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া দুজনকে আরও ধৈর্যশীল করে তোলে। অনেকক্ষণ ঝগড়ার পর হয়তো ক্লান্ত লাগতে পারে বা অশান্তি বাড়াতে না চাইলে চুপ হয়ে থাকতে হয়। এর অর্থ হলো ধৈর্যধারণ করা ক্ষমতা রয়েছে। যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজনের এমন মনোভাব দেখে একসময় সঙ্গীও চুপ হয়ে যাবে। এ কারণে ঝগড়া মানুষকে ধৈর্যশীল করে তোলে।

সম্পর্ক মজবুত হয়

ঝগড়ায় মন হালকা হয়, এমনটিই বলছেন মনোবিদরা। বর্তমানের যান্ত্রিক জীবনে সবাই ব্যস্ত। একে অপরকে যথেষ্ট সময় দিতে পারে না অনেক দম্পতিই। তাদের ক্ষেত্রে ঝগড়া সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। এমন দম্পতিরা প্রয়োজনে অকারণেই ঝগড়া করতে হবে। এতে মন হালকা হবে।

ঝগড়ার সময় ভুলেও যে কথাগুলো বলা যাবে না

সব ভুল তোমার

সঙ্গীর কাঁধে দোষ চাপিয়ে নিজের নির্দোষ সাজা যাবে না। কারণ তালি কখনোই এক হাতে বাজে না। এ কথা বললে সঙ্গী আরও বেশি রেগে যাবে। এ দোষ এড়ানোর জন্য সে ঝগড়া চালিয়ে যাবে।

ঠিক আছে তুমি জিতেছ, আমি হেরেছি— এবার চুপ করো

কখনোই এভাবে চুপ করতে বলা যাবে না। কারণ এভাবে চুপ করতে বললে ঝগড়া বন্ধ হওয়ার জায়গায় আরও বেড়ে যাবে। এতে সঙ্গী যদি বুঝে যায় নিজের দোষ স্বীকার না করে বিরক্ত হয়ে বলা হয়েছে তাহলে ঝগড়া বড় হবে।

পাগলের মতো কথা বলবে না

আরও পড়ুন:

সঙ্গীকে কখনো পাগল না বলাই ভালো। যেকোনো মানুষকেই পাগল বললে তার রাগ বেড়ে যায়। আর ঝগড়ার সময় এমন কথা বললে তো রাগ বাড়বেই।

অন্য কারো সঙ্গে সঙ্গীকে তুলনা করা যাবে না

অন্যের সঙ্গে তুলনা দিয়ে কথা বললে সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। এতে ঝগড়া শেষ হলেও কথাটির রেশ থেকে যায় মনের মধ্যে। এতে সঙ্গী হীনমন্যতায় ভোগে। যার নেতিবাচক প্রভাব তার স্বাভাবিক জীবনে পড়তে পারে।

ছোট বিষয়টি কেন অযথা বাড়াচ্ছো

এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছোট বিষয় অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে। সেজন্য এ ধরনের কথা এড়িয়ে চলতে হবে। এতে ঝগড়া শুরু হওয়ার আগেই থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ঝগড়ার সময় শান্ত থাকার উপায়

ঝগড়ার সময় সবাই শান্ত থাকতে পারে না। অনেকে উত্তেজিত হয়ে যায়। এর ফলে অনেকসময় সঙ্গীর শরীরেও হাত উঠিয়ে ফেলে। যা অত্যন্ত মারাত্মক একটি কাজ। ঝগড়ায় কখনোই এ কাজ করা যাবে না। এজন্য ঝগড়ার সময় যেভাবেই হোক নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর কিছু কৌশল নিচে দেয়া হলো—

চুপ থাকতে হবে

কথার পিঠে কথা বললে ঝগড়া বাড়তেই থাকে। সেজন্য ঝগড়া কমাতে চাইলে পাল্টা জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকা শিখতে হবে। এতে একসময় সঙ্গী নিজেই ঝগড়া করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

আরও পড়ুন:

বোঝার চেষ্টা করতে হবে

রাগের মাথায় অনেকে অনেক কথা বলে থাকে। সেগুলোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে সঙ্গী কী বোঝানোর চেষ্টা করছে সেটার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এটি বুঝতে পারলেই আর ঝগড়া করার প্রয়োজন পড়বে না।

হারতে শিখতে হবে

অনেকে ঝগড়ার সময় নিজেকে জয়ী করার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। অন্যকে নিচে দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। এতে ঝগড়া আরও মারাত্মক রূপ নেয়। সেজন্য ঝগড়া থামাতে চাইলে যেকোনো একজনকে হেরে যাওয়া শিখতে হবে।

ঝগড়া এড়িয়ে চলার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান

যোগব্যায়াম বা ধ্যান

আরও পড়ুন:

নিয়মিত যোগব্যায়াম বা ধ্যান করলে মন শান্ত থাকে। তে কখনোই ঝগড়া করতে মন চাইবে না।

যোগাযোগের ধরন পরিবর্তন

ঝগড়ার সময় যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা না করে, শান্তভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে। এতে চোট ঝগড়া বড় রূপ নেয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে।

সমস্যার গভীরে যেতে হবে

ছোট ছোট বিষয় নিয়েও ঝগড়া হয়, সেজন্য মূল সমস্যাটি চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

এসএস