ভিটামিন-ডি ‘সূর্যের ভিটামিন’ নামেও পরিচিত, কারণ এটি সূর্যের আলো থেকে সংশ্লেষিত হয়। ভিটামিন ডি-এর অভাবে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবারই রোগ হয়ে থাকে। এ ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ হয়। যার প্রভাবে হাড় বেঁকে যায়।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এ ভিটামিনের অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া বা হাড় নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়। এছাড়াও অস্টিওপরোসিস (হাড় ক্ষয়) এবং হাড়ে ব্যথাসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়।
এ ভিটামিনের ঘাটতির কারণে ক্লান্তি, পেশি দুর্বলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা ও কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
শিশুদের বিভিন্ন রোগ
রিকেটস: হাড় নরম হয়ে যাওয়া। ফলে পা বেঁকে যেতে পারে এবং মাথার খুলি বড় হয়ে যেতে পারে।
স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া: রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ ও অন্যান্য জটিলতা
অস্টিওম্যালেসিয়া: হাড় নরম হয়ে যায়, যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।
অস্টিওপরোসিস: হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ে।
হাড় ও পেশিতে ব্যথা: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং দুর্বলতা দেখা দেয়, বিশেষ করে বাহু ও উরুতে।
অন্যান্য সমস্যা: ক্লান্তি ও অবসাদ, চুল পড়া, হাড়ে আঘাত দ্রুত না সারা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, মানসিক রোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি ও ঘুমের সমস্যা।
ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত লক্ষণ
ক্লান্তি ও দুর্বলতা: ক্রমাগত ক্লান্তি অনুভব করা এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেওয়া ভিটামিন ডি-এর অভাবের একটি সাধারণ লক্ষণ।
হাড় ও পেশিতে ব্যথা: হাড়, বিশেষ করে পিঠ এবং পেশীগুলোতে ব্যথা হওয়া একটি পরিচিত উপসর্গ।
ঘন ঘন সংক্রমণ: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বারবার অসুস্থ হওয়া বা সংক্রমিত হওয়া।
মেজাজ পরিবর্তন: মানসিক অবসাদ বা মেজাজ পরিবর্তনের অনুভূতি হওয়া।
ঘুমের সমস্যা: অস্থির বা কম গভীর ঘুম, এবং দিনের বেলা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব অনুভব করা।
চুল পড়া: অতিরিক্ত চুল পড়া ভিটামিন ডি-এর অভাবের একটি লক্ষণ হতে পারে।
ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব: আঘাত বা ক্ষত নিরাময় হতে বেশি সময় লাগা।
ত্বকের সমস্যা: ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত হওয়া, এবং একজিমা বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া।
হাড়ের বিকৃতি: শিশুদের ক্ষেত্রে হাড় নরম হয়ে যাওয়া (রিকেটস) এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড়ের বিকৃতি ও ভঙ্গুরতা (অস্টিওম্যালেসিয়া)।
অন্যান্য লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির মতো রোগের লক্ষণগুলো আরও খারাপ হতে পারে।
ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবারের তালিকা
ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎসগুলো হলো চর্বিযুক্ত মাছ (যেমন স্যামন, টুনা, ম্যাকেরেল), ডিমের কুসুম, কড লিভার অয়েল এবং মাশরুম। এছাড়াও, ভিটামিন ডি-ফর্টিফাইড খাবার যেমন দুধ, কমলার রস এবং কিছু সিরিয়ালও ভিটামিন ডি-এর ভালো উৎস হতে পারে।
প্রধান উৎস
চর্বিযুক্ত মাছ: স্যামন, টুনা, ম্যাকেরেল এবং সার্ডিনের মতো মাছে প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন ডি থাকে। ক্যানড টুনাও একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
ডিমের কুসুম: একটি ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস।
কড লিভার অয়েল: এটি ভিটামিন ডি-এর একটি অত্যন্ত শক্তিশালী উৎস, যা এক চামচেই দৈনিক চাহিদার চেয়ে বেশি ভিটামিন ডি সরবরাহ করতে পারে।
মাশরুম: বিশেষ করে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা মাশরুমে ভিটামিন ডি২ থাকে।
অন্যান্য উৎস
ভিটামিন ডি-ফর্টিফাইড খাবার: অনেক দেশে গরুর দুধ এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধে ভিটামিন ডি যোগ করা হয়। এছাড়াও, কিছু কমলার রস এবং সকালের নাস্তার সিরিয়ালও ভিটামিন ডি-যুক্ত থাকে।
যকৃৎ: গরুর বা টার্কির যকৃৎ-এ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
সবুজ শাকসবজি: পালংশাক, ব্রকলি এবং কিছু সবুজ শাকসবজিতে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকতে পারে।
ভিটামিন ডি-যুক্ত ফল
ভিটামিন 'ডি' সাধারণত ফলে খুব বেশি পাওয়া যায় না, তবে কিছু শুকনো ফল যেমন শুকনো অ্যাপ্রিকট, কিশমিশ এবং ডুমুর ভিটামিন 'ডি' এর ভালো উৎস হতে পারে। এছাড়া, ভিটামিন 'ডি' সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারের মধ্যে রয়েছে চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম, ফোর্টিফাইড দুধ, মাশরুম এবং পনির।
ভিটামিন 'ডি' যুক্ত ফল (শুকনো)
শুকনো অ্যাপ্রিকট: এটি ভিটামিন 'ডি' এর একটি ভালো উৎস।
কিশমিশ: ভিটামিন 'ডি' এর চাহিদা মেটাতে কিশমিশ খাওয়া যেতে পারে।
ডুমুর: এটিও ভিটামিন 'ডি' সমৃদ্ধ একটি শুকনো ফল।
আলুবোখারা: ভিটামিন 'ডি' পেতে আলুবোখারাও খেতে পারেন।
ভিটামিন ডি৩ এর উপকারিতা
ভিটামিন ডি৩ এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে। এর প্রধান উপকারিতাগুলো হলো:
হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখা: ভিটামিন ডি৩ ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য অপরিহার্য। এটি শিশুদের রিকেট এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়া ও অস্টিওপরোসিসের মতো হাড়ের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।ৎ
পেশির কার্যকারিতা: পেশীর সঠিক কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন ডি৩ প্রয়োজন। এটি পেশীর দুর্বলতা রোধ করতে এবং শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য: কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে ভিটামিন ডি৩ এর মাত্রা কম হলে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি৩ মানসিক সুস্থতায় সাহায্য করতে পারে।
হার্ট সুস্থ রাখা: এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
সূর্যালোক হলো ভিটামিন ডি৩ এর প্রধান উৎস। এছাড়াও কিছু খাবার, যেমন তৈলাক্ত মাছ (স্যামন, ম্যাকেরেল) এবং ফর্টিফাইড খাদ্যদ্রব্যে (দুধ, সিরিয়াল) এটি পাওয়া যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভিটামিন ডি ৩ এর অভাবে যা হয়
ভিটামিন ডি ৩ এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, যেমন ক্লান্তি, পেশী ও হাড়ে ব্যথা, ঘন ঘন সংক্রমণ, এবং মানসিক চাপ। শিশুদের মধ্যে রিকেটস এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অস্টিওম্যালাসিয়া হতে পারে, যা হাড়ের বিকৃতি এবং দুর্বলতা ঘটায়।
ভিটামিন ডি ৩ এর অভাবের লক্ষণ ও প্রভাব: হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া; শিশুদের মধ্যে রিকেটস (হাড়ের বিকৃতি) হতে পারে; প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অস্টিওম্যালাসিয়া (হাড় নরম হওয়া), দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথা, পেশীতে দুর্বলতা এবং ব্যথা হতে পারে।
সাধারণ শারীরিক লক্ষণ: ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করা; হঠাৎ চুল পড়ার প্রবণতা দেখা দেওয়া; ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব হওয়া; ঘন ঘন সংক্রমণ হওয়া, কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়; মানসিক ও অন্যান্য প্রভাব; মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের অনুভূতি হতে পারে; মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন হতে পারে; উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কিছু মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।





