সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা কেক: বিশ্বজুড়ে তাৎপর্য অভিন্ন

বিভিন্নরকম কেক
বিভিন্নরকম কেক | ছবি: সংগৃহীত
0

আকাঙ্ক্ষা, অর্জন, প্রাপ্তি, বর্ষপূর্তিসহ যেকোনো উদযাপনের সঙ্গেই কেকের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। এমনকি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এর তাৎপর্যও অভিন্ন। তবে একেক দেশের কেকের স্বাদ ও মানে আছে আলাদা কিছু বিশেষত্ব।

অল্প খেলেই মুখে লেগে থাকে, এমন খাবারটির নাম কেক। যা ভোজনপ্রিয়দের অন্যতম পছন্দ। কারণ মুখরোচক এ খাবার স্বাদে অনন্য। তবে খাবার ছাপিয়ে সংস্কৃতির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে কেক। আবার একেকটি দেশের কেক তৈরিতে ভিন্নতার পাশাপাশি রয়েছে বিশেষ গুণ ও মিষ্টি ইতিহাস।

রেড ভেলভেট যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্লাসিক কেক। যা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় খাবারের সাথে সম্পর্কিত, এটি লালচে-বাদামি রঙের জন্য বেশ পরিচিতি পেয়েছে। ক্রিম ও পনির দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ব্ল্যাক-আউট কেক প্রথম তৈরি করা হয়। এটি মূলত ঘন চকলেট কেক।

আবার আইকনিক আমেরিকান মিষ্টি হিসেবে চিজকেকের অনেক সুনাম রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধ একটি ক্রিমি মিষ্টি। এর জনপ্রিয়তাও অনেক।

অন্যদিকে দেশটিতে ব্যাপকভাবে খাওয়া হয় কাপকেক। যা আকারে ছোট হয়ে থাকে। পার্টি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই কেকটি প্রধান খাবার হিসেবে পছন্দের শীর্ষে।

ক্লাসিক ভিক্টোরিয়া স্পঞ্জ কেক, তাজা স্ট্রবেরি ও ক্রিম দিয়ে তৈরি এ কেক যুক্তরাজ্যে অনেক জনপ্রিয়, খেতেও বেশ মুখরোচক। দেশটিতে বিভিন্ন উৎসবে এর ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। এটি অন্যান্য কেকের তুলনায় অনেকটা হালকা ও নরম।

ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ ফ্রুটস কেকটি দেশটিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। ক্রিসমাসে প্রায় সবাই এ কেকটি খেয়ে থাকেন, আর বছরের বাকি সময়টাতে এর চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। এতে এত বেশি ফল ও মশলা ব্যবহার করা হয়, যা অন্য কোনো কেকে করা হয় না।

আরও পড়ুন:

কানাডায় ঐতিহাসিক কেকের মধ্যে মে ওয়েস্ট বেশ জনপ্রিয়। এটি পুরোটাই ক্রিম দিয়ে তৈরি। এ ডেজার্ট কেকটি দেখতে গোলাকার। দেশটির কুইবেক প্রদেশে মে ওয়েস্টের উৎপত্তি হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর চাহিদা।

কানাডা ওয়ার কেক, নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এটি কোন না কোন যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই কেকটি তৈরি করা হয়। তখন খাদ্য ঘাটতি মিটানো ও রেশনিংয়ের কারণে এটি তৈরি করা হতো। কেকটিকে তৎকালীন যুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক রেসিপি হিসেবেও ধরা হয়। এছাড়াও বাটার টার্ট, টিম্বিটস ও ফ্ল্যাপার পাইসহ অনেক ধরনের ডেজার্ট রয়েছে। যা কেকের মতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

রাশিয়ায় ১৮১২ সালে ফরাসি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়ের শত বছর পূর্তিতে নেপোলিয়ন কেক উদ্ভাবিত হয়েছিল। পেস্ট্রি ক্রিমযুক্ত এই কেকটির অনেকগুলো স্তর রয়েছে। কেকটি ছুটির দিনের জন্য রাশিয়ানদের প্রথম পছন্দ। ফরাসিরা এটিকে মিলেফুইল বা হাজার স্তর বলে থাকে, যুক্তরাজ্যে এটি ভ্যানিলা স্লাইস নামে পরিচিত, আবার বেলজিয়ামে এই একই কেককে টম্পোস বলা হয়। এটি বেশ ক্রিমি ও কোমল; মুখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গলতে শুরু করে।

মেডোভিক বা হানি কেকের মিষ্টি এক ইতিহাস রয়েছে। ১৯ শতকের শুরুর দিকে সম্রাট আলেকজান্ডারের রান্নাঘরে এটি প্রথম বানানো হয়। তার স্ত্রী এলিজাবেথ মধু সহ্য করতে পারতেন না। একদিন এক তরুণ মধু ও ঘন টক ক্রিম দিয়ে কেকটি তৈরি করেন। আশ্চর্যজনকভাবে সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথ এটি খেয়ে তার প্রেমে পড়ে যান। বর্তমানে অসংখ্য ফর্মুলায় মেডোভিক তৈরি হয়।

তুরস্কের সান সেবাস্তিয়ান চিজকেকটি প্রায় পোড়া অবস্থায় থাকে, এটির বাইরের অংশ আবার ক্রিম দিয়ে ভরাট। দেশটির সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেকটি খুব জনপ্রিয়।

মোল কেক দেখতে অনেকটা গম্বুজ আকৃতির হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ কেকটি ক্রিমে ভরপুর। চকোলেট কেকের টুকরো ও কলার টুকরো থাকে। একই সঙ্গে দুধের মিশ্রণ দিয়ে আর্দ্র করা হয়। বাকলাভা ও রেভানি তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী কেক হিসেবে ধরা হয়।

ইএ