বৈশ্বিকভাবে বাঁশ শিল্পকে এগিয়ে নিতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব বাঁশ সংস্থা। এর উদ্যোগেই ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ্ব বাঁশ কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায় বিশ্ব বাঁশ দিবস। দিবসটি পালনের প্রস্তাব করেছিলেন সংস্থার তৎকালীন সভাপতি কামেশ সালাম। অনুষ্ঠানে প্রায় ১০০ দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন এবং দিনটিকে বিশ্ব বাঁশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
এরপর থেকে প্রতি বছর ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব বাঁশ সংস্থার আয়োজনে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঁশ দিবস। দিনটির মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে বাঁশের বহুমুখী উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করা এবং দৈনন্দিন পণ্যে এর ব্যবহার আরও উৎসাহিত করা। আজ থাকছে বাঁশ নিয়ে আলোচনা—
বাঁশ কত প্রকার, কী কী
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১,২০০ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে সাধারণত ২০টির মতো প্রজাতি দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বাজা বাঁশ, মুলি বাঁশ, বাঁশপাতা বাঁশ, বন বাঁশ, ওঠবাঁশ, বাজারি বাঁশ, দণ্ডকাল বাঁশ। এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু ভিন্ন জাতের বাঁশ পাওয়া যায়, যেগুলো দৈর্ঘ্যে বিশাল এবং টেকসই।
বাঁশ খাওয়ার উপকারিতা
শুধু নির্মাণ বা ব্যবহারেই নয়, বাঁশ মানুষের খাদ্যতালিকায়ও স্থান করে নিয়েছে। বিশেষ করে বাঁশের কচি অংশ (বাঁশকোঁড়ি) রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এর উপকারিতার মধ্যে রয়েছে; বাঁশকোঁড়ি ক্যালোরি কম ও আঁশে বেশি, ফলে হজমে সহায়ক। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বাঁশের অঙ্কুরে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এটি উপকারী। চট্টগ্রাম, সিলেট ও পার্বত্য অঞ্চলে বাঁশকোঁড়ির আচার ও তরকারি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বাঁশ পাতার উপকারিতা
বাঁশের পাতা বহু প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি গুণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। পাতা সেদ্ধ করে খেলে জ্বর ও হজমের সমস্যা কমে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বাঁশপাতা ব্যবহার করা হয় শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশির প্রতিকার হিসেবে। পশুখাদ্য হিসেবেও বাঁশপাতা বেশ উপকারী, বিশেষত গরু-ছাগল সহজে হজম করতে পারে।
বাঁশ কী জাতীয় উদ্ভিদ
বাঁশ দেখতে গাছের মতো হলেও এটি আসলে ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাসে এটি Poaceae পরিবারভুক্ত। ঘাসের মতোই এদের ডাঁটা ফাঁপা, গিঁট রয়েছে এবং দ্রুত বাড়তে পারে। বাঁশকে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদের একটি বলা হয়।
বাঁশের জাত
বাংলাদেশে যে বাঁশের জাত বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে—
মুলি বাঁশ (Bambusa balcooa): সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত। ঘরবাড়ি ও আসবাব নির্মাণে উপযোগী।
বাজা বাঁশ (Dendrocalamus giganteus): লম্বা ও মোটা, বিশালাকার কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত।
ওঠবাঁশ: চটের কাঠামো, মাচা বা অস্থায়ী কাজের জন্য ব্যবহৃত।
বন বাঁশ: পাহাড়ি এলাকায় বেশি পাওয়া যায়, লম্বা ও শক্ত।
বাঁশ কোন জাতীয় উদ্ভিদ
বাঁশকে অনেকে গাছ মনে করলেও এটি আসলে চিরসবুজ বহুবর্ষজীবী ঘাস। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফাঁপা কাণ্ড, গিঁটযুক্ত বৃদ্ধি, আর ঝোপ আকারে বেড়ে ওঠা।
বাংলাদেশে কত প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়
বাংলাদেশে প্রায় ১৯–২০ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। পাহাড়ি এলাকা, বনাঞ্চল ও গ্রামীণ অঞ্চলে এদের বিস্তার বেশি। ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোতে বাঁশের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে।
বাঁশ গাছের বৈশিষ্ট্য
বাঁশের কাণ্ড ফাঁপা এবং গিঁটযুক্ত। দ্রুত বেড়ে ওঠে; দিনে কখনও কখনও এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। মজবুত ও নমনীয়; যার কারণে বাড়ি, সেতু, মাচা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। পরিবেশবান্ধব, বাঁশ প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন ছাড়ে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঁশের ঝাড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাঁশের চারা কোথায় পাওয়া যায়
দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নার্সারিতে বাঁশের চারা পাওয়া যায়। বন বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় নার্সারিগুলো বাঁশের চারা উৎপাদন ও বিতরণ করে থাকে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থানীয় কৃষকেরাও বাঁশের চারা বিক্রি করেন।
বাঁশ গাছ কী কী কাজে লাগে
বাংলাদেশে বাঁশকে বলা হয় ‘গরিবের সোনা’। এর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে, যেমন—
গৃহনির্মাণ: খুঁটি, দেয়াল, ছাদ তৈরিতে।
আসবাবপত্র: চেয়ার, টেবিল, খাট, মাচা, শোওয়ার পালঙ্ক ইত্যাদি।
হস্তশিল্প: ঝুড়ি, ডালা, মাছ ধরার ফাঁদ, বাঁশি।
কাগজ শিল্প: বাঁশের আঁশ থেকে কাগজ তৈরি হয়।
খাদ্য: বাঁশকোঁড়ি ও বাঁশপাতা।
জ্বালানি: শুকনো বাঁশ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।





