বিদেশে এখন , এশিয়া
পরিবেশ ও জলবায়ু
0

ভারতে তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে

পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মনিপুরসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ক্ষতবিক্ষত করে গেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। অন্যদিকে, তীব্র দাবদাহের কবলে উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানাসহ উত্তরের রাজ্যগুলো। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজস্থানে, ৫০ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দাবদাহে এ রাজ্যে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ছয়জনের।

মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজস্থানের চুরু এলাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫০ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে সাড়ে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

প্রচণ্ড গরমে ভারতজুড়ে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার ব্যবহার। গেলো বছর মে মাসে দেশটিতে দিনে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ছিল ২২০ গিগাওয়াটের ঘরে, যা এক বছরের ব্যবধানে চলতি মাসে ছাড়িয়েছে ২৩০ গিগাওয়াট। আগামী মাসে দিনের বেলা এ অঙ্ক ২৪০ এর ঘর ছোঁবে বলে ধারণা ভারতীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের। গরম থেকে মুক্তি পেতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার বাড়তে থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ট্রান্সফর্মারের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে এবং ওভারলোডিং এড়াতে সেখানেও বিশাল বিশাল কুলার আর ফ্যান বসাচ্ছে প্রশাসন।

লখনৌ'র সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তা রাজিব যাদব বলেন, 'আগামী ক'দিনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এমন সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ভীষণ চাপ পড়ে। এসি আর কুলারের জন্য অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। ওভারলোডের কারণে ট্রান্সফর্মারের উত্তাপ ঠেকাতে এখানেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।'

ভারতের গোটা উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়েই বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে অসুস্থ হয়ে রাজ্যটিতে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আবহাওয়া খুব খারাপ। ৭০ বছরের জীবনে কখনো এমন গা জ্বালানো গরম দেখিনি। তাপ থেকে বাঁচতে মাথা ঢেকে রেখেছি কাপড় দিয়ে।

রাজস্থানের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী কিরোদি লাল মিনা বলেন, 'ময়নাতদন্তে ছয়জনের মৃত্যুর কারণ উচ্চ তাপমাত্রা বলে জানা গেছে। আরও ছয়জনের ময়নাতদন্ত হয়নি।'

রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চন্ডিগড়, দিল্লি, গুজরাট এবং উত্তর প্রদেশের পশ্চিমে সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা হিসেবে জারি আছে রেড অ্যালার্ট। মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়েও চলছে দাবদাহ। এমনকি হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়ের মতো তুলনামূলক শীতল রাজ্যগুলোতেও পাহাড়ি এলাকায় অসহনীয় গরমে ভুগছেন বাসিন্দারা। উচ্চ তাপমাত্রা আর শুষ্ক বাতাসে দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে উত্তরাখন্ড আর জম্মু-কাশ্মীরের বনাঞ্চলে।

অন্যদিকে সাইক্লোন রিমালের প্রভাবে অতিবৃষ্টি আর ঝড়ে ক্ষতবিক্ষত পশ্চিমবঙ্গ, মনিপুর, আসাম, ওড়িষা, মিজোরামসহ কয়েকটি রাজ্য। ঝড় থেমে গেলেও বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে মনিপুরের একটি এলাকা। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাতেই শেকড় উপড়ে পড়েছে ৫০০ এর বেশি গাছ, যা সাইক্লোন আমফান আর আইলার পর গেলো কয়েক বছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ। একই পরিস্থিতি আসামেও। ভারী বৃষ্টিতে তীব্র বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে প্রাদেশিক রাজধানী গুয়াহাটিসহ নিম্ন উপকূলীয় অঞ্চলে।

রিমালের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় শুধু ভারতে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৩৯ জনের। দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে আগামী কয়েকদিন বেশ ভারী বৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া বিভাগ।